রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার - রূপচর্চায় মধু ও নিমের ব্যবহার

রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আপনি কি জানতে চান রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে? আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার করা হয় কি উপায়ে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও নিমপাতায় রয়েছে ভেষজ গুনাগুন। রূপচর্চায় নিম ও মধুর ব্যবহার যুগ যুগ ধরেই হয়ে আসছে। রূপচর্চায় মধু ও নিমের ব্যবহার কিভাবে করে তা অনেকেই জানিনা। তাহলে আস এর সম্পর্কে জেনে নিই।

পোস্ট সূচিপত্র ঃ রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার - রূপচর্চায় মধু ও নিমের ব্যবহার

রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার 

রূপচর্চায় নিমপাতার ব্যবহার একটি জাদুকরি উপায়। কমবেশি আমরা নিম পাতার উপকার সম্বন্ধে সবাই জানি। নিম পাতার উপকার বলে শেষ করা যাবে না। আমরা নানাভাবে রূপচর্চায় নিমপাতার ব্যবহার করে থাকি।

  • নিমপাতা ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর একটা পাতিলে করে পাতাগুলো সেদ্ধ করুন। সিদ্ধ করা পাতা পাটায় পিষে একটি মিহি পেস্ট তৈরি করুন। তারপরে পেজটি আপনি আপনার ত্বকে মাখুন ৫ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন। এই পেস্ট টি লাগানোর জন্য আপনার ত্বকে থাকা এলার্জি চুলকানি ভালো হয়ে যাবে।
  • নিমপাতা বেটে সে সাথে লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগালে মুখের মৃত কোষ দূর হবে এবং ব্রণের দাগ থাকলে তা সম্পূর্ণরূপে মুছে যাবে।
  • একটি পাত্রে নিম পাতার পাউডার নিন। এর সাথে পরিমান মত কাঁচা দুধ, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, মধু একসাথে নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন পরিষ্কার মুখের পেস্ট টি এপ্লাই করুন। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাক টি আপনার মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে সেই সাথে ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতে এটি খুবই কার্যকর।
  • নিম পাতা, পুদিনা পাতা, তুলসী পাতা একসাথে নিয়ে ব্লেন্ড করুন। এর সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস এবং মধু যোগ করুন। এ পেস্ট টি ব্রণের দাগ, বলিরেখা, রোদে পোড়া দাগ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল ফর্সা এবং আকর্ষনীয় করে তুলতে সাহায্য করে।

নিম পাতার উপকারিতা

বহু ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ নিমপাতা আমাদের ত্বকের জন্য যেমন উপকারী ঠিক তেমনি শরীরের জন্যও অনেক উপকারী। নিম পাতা আমাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে। রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার আর্টিকেল টিতে এবারে আমরা জানবো নিমপাতা সকল উপকারিতা।

  • বিশেষ করে চর্মরোগে নিমপাতার চিকিৎসা প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। ত্বকের আলসার, পেটে ব্যথা, ডায়াবেটিস, মাড়ি ফুলে যাওয়া, হৃদপিন্ডের সমস্যা, কুষ্ঠ রোগ ইত্যাদি কঠিন শারীরিক সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা করে এই নিম পাতা।
  • কৃমিনাশক, মুখের মাড়ির রোগ, মুখে দুর্গন্ধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখে নিমপাতা। ক্ষতস্থানে নিমপাতা বেটে লাগালে ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। নিমের নির্যাস অত্যন্ত কার্যকরী এবং শক্তিশালী যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সাহায্য করে। নিমের নির্যাস থেকে তৈরি পেস্ট দাঁতের এর জন্য খুবই উপকারী।
  • বর্তমানে ত্বকের যত্নেও নিম পাতা র ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে। নিমপাতা বেটে সেই সাথে মধু লেবু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিয়মিত মাখলে ব্রণের উপদ্রব থেকে বাঁচা যায়। আমাদের যাদের মাথায় উকুনের সমস্যা রয়েছে তারা নিম পাতা বেটে মাথায় লাগালে উকুনের উপদ্রব থেকে বাঁচা স্বম্ভব।
  • এছাড়াও নিমের পাতা পাকস্থলীকে কৃমিনাশক করতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ রাখে। এক্ষেত্রে আপনাকে নিমপাতা ভালোভাবে ধুয়ে ভালো করে বেটে নিতে হবে। বেটে নিয়ে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করুন এবং রোদে শুকাতে দিন। প্রতিদিন সকালে খালি একটি করে নিম পাতার তৈরি বড়ি খান । এটি নিয়মিত পাঁচ থেকে ছয় দিন খেলে কৃমির সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।

তৈলাক্ত ত্বকে নিম পাতার ব্যবহার 

রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার ও রূপচর্চায় মধু ও নিমের ব্যবহার  অনেক গুণে বেড়ে গেছে। রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার এই আর্টিকেলটিতে এবারে আমরা জানবো তৈলাক্ত ত্বকে নিমপাতার ব্যবহার সম্পর্কে।

  • দাগহীন কোমল ত্বক ফর্সা ত্বক প্রতিটি নারীর কাম্য। নিজেদের কিছু অনিয়মের কারণে আমাদের ত্বক নষ্ট হয়ে যায়। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে ব্রণের সমস্যা সবচেয়ে জটিল সমস্যা। তৈলাক্ত ত্বকে আমরা কিভাবে নিমপাতার ব্যবহার করব অনেকেই জানিনা। আসুন আমরা জেনে নিই তৈলাক্ত ত্বকে কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করবেন।
  • তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সমস্যা বেশি হয়। নিম পাতা এবং তুলসী পাতা একসাথে বেটে বা ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এর সাথে চন্দন কাঠের গুঁড়ো বা মুলতানি মাটিও নিতে পারেন। এ পেস্ট টি মুখে মেখে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হালকাভাবে স্ক্রাব করে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । এই প্যাকটি আপনার ত্বকের কালো দাগ এবং ব্রণও কমাতে সাহায্য করবে।
  • নিম পাতার গুড়োর সাথে হলুদ বাটা একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এ পেস্ট টি মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার 

রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার ও রূপচর্চায় মধু ও নিমের ব্যবহার এই আর্টিকেল এবারে আমরা জানবো চর্মরোগে নিম পাতা কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ ওষুধ হিসেবে চর্মরোগ চিকিৎসায় নিম পাতার ব্যবহার আসছে। শরীরের যে কোনো ক্ষত সারাতে নিম পাতা ব্যবহার হয়। নিমপাতা ভালোভাবে ধুয়ে বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে তাড়াতাড়ি ক্ষতস্থান শুকিয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ চিকন হওয়ার উপায় - মেয়েদের চিকন হওয়ার সহজ উপায়

এছাড়া যে কোনো চর্মরোগে নিমপাতা বাটা লাগালে উপকার পাওয়া যায়। নিম গাছের ছাল পাতা একটি বড় হাঁড়িতে জাল দিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে অনেক চর্ম রোগ ভালো হয়ে যায়। নিম পাতার সাথে মধু মিশিয়ে ক্ষতস্থানে লাগালে ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি সেরে যায়।

নিমপাতা ও মধুর উপকারিতা 

রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার এবং মধুর ব্যবহার সমানভাবে হয়ে থাকে।  নিম পাতা এবং মধু দুটোই প্রাকৃতিক হারবাল উপাদান। এই দুটি উপাদান এই রূপচর্চায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

নিমপাতা মধু মুলতানি মাটি বা চন্দন গুড়া দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মুখে এপ্লাই করুন। একমাস নিয়মিত ব্যবহারে আপনি আপনার ত্বকের পার্থক্য বুঝতে পারবেন। মধুতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার ত্বকের ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।

নিম পাতা দিয়ে চুলের যত্ন

শুধু রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার হয়না। চুলের যত্নে নিম পাতার রস ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার ও রূপচর্চায় মধু ও নিমের ব্যবহার আর্টিকেলটিতে এবারে জানবেন নিম পাতা দিয়ে কিভাবে চুলের যত্ন করতে হয়। নিমপাতা ভালোভাবে ধুয়ে বেটে রস বের করে মাথার চুলে লাগালে নতুন চুল গজায়, চুল শক্ত হয়, মাথার ত্বকে চুলকানি থাকলে সেটা ভালো হয়ে যায়, শুষ্কতা কমে যায়। এছাড়াও নিমের তেলের রয়েছে ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি এসিড যা চুলের জন্য খুবই উপকারী। মাথায় উকুন এর উপদ্রব থাকলে নিম পাতার রস ব্যবহারে চলে যাবে।

নিম পাতার অপকারিতা

নিমগাছ এমন একটি গাছ যে গাছের ডাল, শিকড়, পাতা প্রতিটি অংশই ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এই গাছের ছাল বেদনানাশক হিসেবে এবং ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। এত উপকারী হওয়া সত্ত্বেও নিমপাতার কিছু উপকারিতা রয়েছে যেমন গর্ভাবস্থায় নিমগাছের কোন কিছুই খাওয়া যাবেনা। 

আরো পড়ুনঃ বাদল শব্দের অর্থ কি - বাদল নামের অর্থ কি

এটি শরীরের শুক্রানু কোষ প্রত্যাখ্যান করে বা গর্ভবতী ভ্রুনকেও নষ্ট করে দিতে পারে যার ফলে গর্ভপাত হতে পারে। তাই গর্ভকালীন সময়ে নিমপাতা এড়িয়ে চলা উচিত। নিম গাছের কিছু পদার্থ শিশুদের রে-সিনড্রোম এর উপসর্গের কারণ হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে এ গাছের কোন কিছুই ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

নিম পাতা গুড়া করার নিয়ম 

আমরা শুধু রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার করি। কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার কিভাবে করব? জেনে নিন রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে কিছু টিপস। কিছু পাতা নিন এবং পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ফেলুন। পাতাগুলো ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে একটি পরিষ্কার জায়গায় রোদে শুকাতে দিন । কড়া রোদ হলে দুই দিনের মধ্যেই শুকিয়ে যাবে অন্যথায় তিন দিন সময় লাগতে পারে।

মচমচে হয়ে শুকানোর পর পাতাগুলো শিলপাটা বা ব্লেন্ডারে করে গুড়ো করুন। ব্যাস হয়ে গেল নিমপাতার গুড়ো। একটি কাচের বৈয়ম এ করে সংরক্ষণ করুন। ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত এই গুড়ো সংরক্ষণ করা যায়। এই নিমপাতার গুড়ো আপনার ত্বকের নানা জটিলতার সমস্যার সমাধান দেবে।

তো বন্ধুরা রূপচর্চায় নিম পাতার ব্যবহার ও রূপচর্চায় মধু ও নিমের ব্যবহার সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে এবং আপনারা অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। আর্টিকেল টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। সবাই ভাল থাকবেন আর এমন সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন।  আল্লাহ হাফেজ। ২৩২৬১

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

fasttechit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url