সুদ কি? - সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান

সুদ সম্পর্কে কমবেশি আমরা সবাই জানি। সুদ কি? সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান সম্পর্কে জেনে রাখা উচিৎ সবার। কেননা ইসলামে সুদ যেভাবে নিষিদ্ধ হয়েছে তা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মানা বাধ্যতামূলক।

তাহলে জানা যাক সুদ কি? সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান কি। আর আমাদের জীবন ব্যবস্থায় সুদ থেকে কিভাবে বেঁচে চলা যাবে। সুদের সাথে যারা সম্পর্ক রাখে তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ সুদ কি? - সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান

সুদ কি? ইসলামে সুদ কেন হারাম?

আমাদের আজকের পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো সুদ কি? ইসলামে সুদের বিধান। এখন আমরা জানব সুদ কি? ইসলামে সুদ কেন হারাম?

ইসলামি শরীয়াহ মতে কিছু লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়াহ এর বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত যা কিছু নেওয়া হয় তাকেই সুদ বলে হয়।

আরও পড়ুনঃ নবী (সাঃ) কতবার হজ্জ করেছেন?

আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন। কারণ ব্যবসায় অর্থ আসে শ্রম, মেধা আর সময়ের বিনিময়ে যা হালাল। কিন্তু সুদ থেকে যে অর্থ আসে তা পেতে কোন প্রকার শ্রম বা মেধার বিনিময় থাকেনা।

কিন্তু জিনি ঋণ গ্রহণ করেন তাকে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয় যা তার উপর জুলুম হয়। আর এ জন্যই ইসলামে সুদকে হারাম করা হয়েছে। আর সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান মেনে চলা আমাদের দায়িত্ব। আশা করি সুদ কি? ইসলামে সুদ কেন হারাম এই বিষয়ে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন।

সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান

আল্লাহ কেনা বেঁচাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম। সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান অনুসরন না করলে সেই বুক্তি যেন মহা ঘৃণ্য কাজের মাঝে আছে। সুদ সম্পর্কে রাসূল (সা:) বলেছেন সুদ হলো সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজের মধে একটি।

নবীজি (সা:) দুনিয়াতে যে সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন সেগুলো হলো

  1. আল্লাহর সাথে শরিক করা
  2. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা
  3. যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন
  4. জাদু করা
  5. সুদ খাওয়া
  6. এতিমের সম্পদ আত্মসাত করা
  7. জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া

(তিরমিজি, হাদিস: ১২০৬) এ বর্ণিত হয়েছে সুদের সাথে জড়িত সবাই অভিশপ্ত। বলা হয়েছে যে সুদ খাও, যে খাওয়ায়, যে হিসাব রাখে বা যে সাক্ষী থাকে বা যে চুক্তিপত্র লিখে দেয় তাদের সবার প্রতি রাসূল (সা:) লানত করেছেন। কাজেই আমাদের সকলের উচিৎ সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান অনুসরন করে চলা।

সুদ খেলে কি নামাজ হবে

যারা সুদ খায় বা সুদের সাথে জড়িত থাকেন তাদের খুব জঘন্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুদ খেলে কি নামাজ হবে এই বিষয়ে জানতে হলে সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান জানতে হবে। তাহলে জানা যাক সুদ খেলে কি নামাজ হবে

যেকোন ধরণের ইবাদত কবুলের আগে শর্ত হলো আপনি যে উপার্জন থেকে খাবার খাচ্ছেন সেটি হালাল কিনা। পরিত্র কুরআনের বলা হয়েছে " হে রাসুলরা, তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকর্ম করো".....। ( সুরা মুমিনুন, আয়াত: ৫১)

আরও পড়ুনঃ চিকন হওয়ার উপায় - মেয়েদের চিকন হওয়ার সহজ উপায়

এদিকে হাদিসে বলা হয়েছে হারাম উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে খাদ্য খেলে তার কোন ইবাদত কবুল হয়না। নবীজি (সা:) বলেন "বৈধ জীবিকার ইবাদত ছাড়া কোন ধরনের ইবাদত আল্লাহর নিকট গিয়ে পৌছে না।" ( বুখারি, হাদিস: ৭৪৩০ )

এ থেমে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে সুদ খেলে নামাজ হবে না। শুধু নামাজ নয় তার কোন ইবাদত কবুল হবেনা এমন বলেছেন নবীজি (সা:)।

রিবা ও সুদের মধ্যে পার্থক্য

সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান পড়লে আমরা বুঝতে পারব রিবা ও সুদের মধ্যে পার্থক্য আছে কিনা। আমরা অনেকেই মনে করে থাকি রিবা ও সুদের মধ্যে পার্থক্য নেই, কিন্তু রিবা ও সুদের মধ্যে পার্থক্য আছে।

রিবা অর্থ হলো বৃদ্ধি, পরিবর্ধন, স্ফীতি, বেশি ইত্যাদি। পবিত্র কুরআন মাজীদে যেসকল বিষয়কে  রিবা শব্দ এর মধ্যে রেখে হারাম করা হয়েছে সেই বিষয়কে উর্দু ও বাংলা ভাষায় সংকীর্ণ করে সুদ বলে থাকি। তাই অনেকেই রিবা আর সুদকে এক মনে করেন। কিন্তু আসলে সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান জানলে বুঝতে পারা যায় যে রিবা হলো অনেক বিস্তৃত বিষয় যার একটি অংশ মাত্র সুদ। 

সুদের ক্ষেত্রে নিশ্চিত ও সুনির্দিষ্ট এই দুইটি সম্পর্ক থাকে। যেখানে রিবায় এমন কিছু থাকেনা। কাজেই বলা যায় যেসকল বিষয় নিয়ে রিবা হয় তার মাত্র একটি অংশ হলো সুদ।

ইসলামে সুদ যেভাবে নিষিদ্ধ হয়

সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান থেকে জানা যায় ইসলামে সুদ যেভাবে নিষিদ্ধ হয়। আসলে জাহেলিয়াত এর যিগে রিবার প্রচলন ছিল। যার দরুণ দেখা যায় যারা ঋণ গ্রহণ করতেন তারা অতিরিক্ত অর্থ সম্পদ পরিশোধ করতে গিয়ে নি:স হয়ে যেতেন।

আরও পড়ুনঃ জীবন বীমা প্রিমিয়াম কি - জীবন বীমা প্রিমিয়াম কি হিসাব

আমাদের প্রিয় নবীজি এই সুদ বা রিবা কে খুব কঠিন ভাষায় নিষেধ করেছেন। সুদ সবসময় নিষিদ্ধ ছিল। সকল জাতীর কাছেই সুদ নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু জাহেলি যুগের মানুষের কাছে সুদ এমন হয়ে যায় যে সুদ ছাড়া তারা চলতেই পারতনা। যেমনটা আমরা বর্তমানে দেখতে পাই। তাই মহান আল্লাহ সুদকে একবারে নিষিদ্ধ করেন নি। চার স্তরে সুদকে হারাম করা হয়েছে।

প্রথম স্তরঃ

প্রথমে সুদের নিন্দা জ্ঞাপন করে আল্লাহ বলেছেন" তোমরা যেসকল সুদ প্রদান করো মানুষের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য তা আল্লাহর কাছে বাড়বে না। বরং তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে জাকাত প্রদান করো তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে"।

( সুরা রুম, আয়াত: ৩৯ )

এখানে সুদকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। নিন্দা করা হয়েছে।

দ্বিতীয় স্তরঃ

এই স্তরে সুদের কারণে আগের উম্মতের পরিনতির কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন " ইহুদিদের জুলুমের কারণে তাদের প্রতি যেসকল বস্তু বৈধ ছিল আমি তা অবৈধ করেছি, এবং যেহেতু তারা আল্লাহর পথ থেকে অনেককেই প্রতিরোধ করত এবং সুদ নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও গ্রহণ করত"। ( সুরা নিসা, আয়াত: ১৬০ )

এখানে আল্লাহ ইঙ্গিতের মাধ্যমে সুদকে নিষিদ্ধ বা হারাম করেছেন।

তৃতীয় স্তরঃ

এই স্তরে চিক্রবৃদ্ধিহারে সুদ হারাম এটি ঘোষণা করে আল্লাহ ইরশাদ করেন, " হে বিশ্বাস স্থাপনকারীরা,  তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ সুদ গ্রহণ করোনা এবং আল্লাহ কে ভয় কর, যেন তোমরা সুফল প্তাপ্ত হতে পারো। আর তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় করো যা অবিশ্বাসীদের জন্য রাখা হয়েছে"। (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১৩০)

চতুর্থ স্তরঃ

এই স্তরে দশম হিজরিতে আল্লাহ সুদকে হারাম করেছিলেন। পরিত্র কুরআনে সুদকে কঠোরভাবে বর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এবং আল্লাহ বলেন, " হে বিশ্বাস স্থাপনকারীরা, আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমরা যদি মুমিন হও তাহলে সুদের মধ্যে যা বাকি আছে তোমিরা তা বর্জন করো। কিন্তু যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ ও রাসুলের পক্ষ থেকে গোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। যদি তোমিরা ক্ষমা প্রার্থিনা করো তাহলে তোমাদের জন্য মূলধন আছে। তোমরা অত্যাচার করবে না আর অত্যাচারীত হবে না। " ( সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৮)

তাই বিদায় হজের সময় নিবীজি (সা:) সুদকে চুড়ান্তভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন। আর এভাবেই সুদ সম্পর্কে  ইসলামের বিধান গড়ে ওঠে আর ইসলামে সুদ যেভাবে নিষিদ্ধ হয় তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইসলামে সুদ ও মুনাফার পার্থক্য

আমাদের আজকের পোস্টটির আলোচ্য বিষয় হলো সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান। এরই ধারাবাহিকতায় এখন আমরা জানব ইসলামে সুদ ও মুনাফার পার্থক্য কি।

সুদ হলো সাময়িক যা যিনি সুদ গ্রহণ করেন সেও শান্তি ভোগ করতে পারবেনা। বরং তাদের জন্য কঠোর শাস্তি ও আজাব অপেক্ষা করছে।

কিন্তু মুনাফার মধ্যে আছে হালাল সম্পদের শান্তি। যার ফলে মুনাফা অর্জন কারীরা আল্লাহর প্রতি অনুগত থেকে ইবাদতের দিকে ধাবিত হয়।

সুদ হল হারাম আর মুনাফা হলো হালাল। সুদে কোন শান্তি নেই আছে ক্ষতি কিন্তু মুনাফায় আছে অফুরন্ত শান্তি ও এটি তালাশ করাও একটু ইবাদতের মত। মুনাফায় মানুষের ঈমান বাড়ে আর সুদের ফলে মানুষের মনে অহংকার ও কৃপণতা আসে।

সুদে কোন ঝুঁকি থাকেনা কিন্তু মুনাফায় লাভ ক্ষতির ঝুঁকি থাকে তাই মুনাফা হালাল। ইসলামে সুদকে হারাম করা হয়েছে আর মুনাফাকে করা হয়েছে হালাল।

সুদের সাথে জড়িত কারো কোন ধরণের ইবাদত আল্লাহর কাছে পৌছাবেনা। কিন্তু মুনাফা হলো হালার রুজি তাই সকল ইবাদত আল্লাহর দরবারে পৌছাবে।

সুদের কারণে সামাজিক যে বব্ধন তা ছিন্ন হিয়ে যায় আর মুনাফায় তা বৃদ্ধি পায়। আসলে আমাদের সকলেরই উচিৎ এই ছোট জীবনে সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান জেনে বুঝে তার পরে লেনদেন করা। উপরের শক্তিগুলো দ্বারা প্রকাশ পায় ইসলামে সুদ ও মুনাফার পার্থক্য রয়েছে বিষাদাকারে।

সুদের ক্ষতিকর দিক

সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান থেকে জানা যায় সুদের ক্ষতিকর দিক আসলে প্রচুর। বলা যায় সুদের কোন উপকারী দিক নেই।সবকিছুই যেন  সুদের ক্ষতিকর দিক।

আপনি যদি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকেন তাহলে সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান থেকে বুঝতে পারবেন সুদ কত জঘন্য ও হারাম কাজ। নিম্নে সুদের ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করা হলো

  1. সুদ হলো হারাম বা নিষিদ্ধ। যার কারণে জাহান্নামে যেতে হবে
  2. সুদের মাধ্যমে মনের শান্তি থাকেনা।
  3. সুদের সাথে যুক্ত যেকেউ আল্লাহ ও রাসুলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত আছে
  4. সুদ কে এত জঘন্য ভাবে বলা হয়েছে যে সুদ খাওয়ার অপরাধ নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচার করার অপরাধের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
  5. সুদ সামাজিক বিন্ধন নষ্ট করে দেয়
  6. সুদ খাওয়া কবীরাহ গুণাহ
  7. সুদ খাওয়া আল্লাহর নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতার সমান
  8. সুদ খেলে সামাজিক মর্যাদা কমে যায়।
  9. সুদ খেলে মৃত্যু পর অপেক্ষা করছে ভ্যায়ংকর শাস্তি।
  10. সুদের অর্থে কোন প্রকার বরকত থাকেনা। তাই আপাতদৃষ্টিতে বৃদ্ধি মনে হলেও আসলে থাকেনা।
  11. সুদের সাথে সম্পর্ক থাকলে ঈমান থাকেনা আর অন্তরে কোন শান্তি থাকেনা।

সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান অনুসরন করলেই কেবল শান্তি পাওয়া সম্ভব। আর শরীয়াহ মেনে আর্থিক লেনদেন করলে আল্লাহ তার সম্পককে বৃদ্ধি করে দেন বহুগুণ। কাজেই আমরা সুদ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করব। কেননা এটি নিজের মায়ের সাথে বহুবার ব্যভিচার করার মত জঘন্য অপরাধ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

fasttechit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url