ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল
আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের রিজিক বৃদ্ধির জন্য নানা কাজ করে থাকি বা চিন্তায় থাকি কিভাবে আমাদের রিজিক বাড়বে। বিশেষ করে এই উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারে এসে সবাই চাই নিজেদের আয় বৃদ্ধি পাক বা রিজিক বৃদ্ধি হোক।
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল রয়েছে যেগুলো আমল করার মাধ্যমে আমাদের রিজিক বৃদ্ধি করতে পারব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - তাওবাহ-ইসতেগফার
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - আল্লাহর রাস্তায় দান করা
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - তাকওয়ার ওপর অটল থাকা
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - বার বার ওমরাহ করা
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - বিয়ে করা
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - অসহায়দের দান করা
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - ইবাদতের জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখা
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - যেকোন কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - কুরআনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - সকালবেলা কাজ শুরু করা
- ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - আল্লাহর উপর ভরসা করা
- আমাদের শেষ কথা
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - তাওবাহ-ইসতেগফার
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণনা করেছেন,' যারা বেশি বেশি করে তাওবাহ-ইসতেগফার করে তাদের সামনে যত অভাব বা সংকট ই আসুক না কেন। মহান আল্লাহ তা সমাধান করে দেন।' ( মুসতাদরেকে হাকেম)
আরও পড়ুনঃ বাচ্চা পেটে আসলে কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হয়
কয়েকটি তাওবাহ-ইসতেগফার হলো
উচ্চারণঃ 'আস্তাগফিরুল্লাহ'
অর্থঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
উচ্চারণঃ ' আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি'।
অর্থঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।
উচ্চারণঃ 'রাব্বিগ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়া ইন্নাকা তাওয়াবুর রাহিম'।
অর্থঃ হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুনাময়'।
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - আল্লাহর রাস্তায় দান করা
যারা আল্লাহর রাস্তায় বেশি বেশি দান করেন তাদের রিজিক আল্লাহ অনেকগুণে বারিয়ে দেন। এই বিষয়ে আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা করেছেন," হে রাসূল! আপনি বলুন নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার ইচ্ছে তার রিজিক বৃদ্ধি করেন এবং কমিয়ে থাকেন। এবং আল্লাহর রাস্তায় তোমরা যা ব্যয় করো তার প্রতিদান তিনি দিবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকদাতা"। ( সুরা সাবাহ: আয়াত ৩৯)
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - তাকওয়ার ওপর অটল থাকা
আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং তাকওয়া অর্জন করলে আল্লাহ এই বান্দার প্রতিদান দেন বরকত ও কল্যাণ এর মধ্য দিয়ে।
আরও পড়ুনঃ মৃত ব্যক্তির গোসলের নিয়ম - মৃত ব্যক্তির দাফনের নিয়ম
আল্লাহ তা'আলা বলেন, "আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার নিস্কৃতির পথ বের করে দিবেন। আর তাঁকে তাঁর ধারণার বাইরের পথ থেকে রুজির ব্যবস্থা করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবেন তিনিই তার জন্যে যথেষ্ট হবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।" (সূরা তালাক : আয়াত ২-৩)
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা
আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কল্যাণ ও বরকত বয়ে আনা যায়। এটি অনেক পরীক্ষিত একটি আমল। নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাই বোনের সঙ্গে সেইসাথে রক্তের সম্পর্ক যাদের সঙ্গে আছে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা।
এই বিষয়ে হাদিসে বর্ণনা করে হযরত আনাস (রা:) বলেছেন, "রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন যে যে ব্যক্তি তার রিজিক বাড়াতে চায় বা প্রশস্ত করতে চায় তার হায়াত বায়ুকে দীর্ঘায়িত করতে সে যেন আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। " ( বুখারী ও মুসলিম )
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - বার বার ওমরাহ করা
যারা অভাব ও গুনাহ কমাতে চায় তাদের জন্য বারবার ওমরা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, "রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি ওমরাহ করে আমরা তার গুনাহ অভাব দূরে সরিয়ে দেয়। " ( তিরমিজি )
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - বিয়ে করা
রিজিক বৃদ্ধির সবচেয়ে কার্যকরী আমল হলো বিয়ে করা। যারা নেক নিয়তি বিয়ে করবে তাদের রিজিক বৃদ্ধি পাবে আল্লাহ তাদের অভাব দূর করে দিবেন।
আরও পড়ুনঃ ইসলামিক অর্থনীতি - ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং
এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন, "তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয় তাহলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দিবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ। " ( সূরা নূর, আয়াত ৩২)
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা
অভাব থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে কিংবা রিজিক বৃদ্ধি করতে চাইলে আল্লাহর কাছে চাওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। যেকোনো বিষয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করার কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন,,"তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। "( সূরা গাফির/মমিনুন: আয়াত ৬০)
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - অসহায়দের দান করা
অসহায় এবং অভাবীদের সঙ্গে ভালো আচরণ এবং দান করলে আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। হাদীসে এসেছে, "অসহায়দের প্রতিদানের বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রিয় নবী রাসূল (সা:) বলেছেন, দান করার মতো যদি কিছু না থাকে তাহলে একটি খেজুরের অংশ দিয়ে হলে দান করার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করো। "
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - ইবাদতের জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখা
ইবাদত তথা নামাজের উপর গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে নিজে যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন একইভাবে পরিবারের অন্য সদস্যদের নামাজের জন্য তাগিদ দিতে হবে। এর ফলে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দিবেন বলে এভাবে ঘোষণা করেছেন
'আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের নামাযের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোন রিজিক চাইনা আমি আপনাকে রিজিক দেই এবং আল্লাহকে ভয় করার পরিণাম শুভ এবং কল্যাণকর। '( সুরা ত্বাহা, আয়াত ১৩২)
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - যেকোন কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
রাসুল (সা:) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন খাবার খায় তার পূর্বে যদি বিসমিল্লাহ বলে তাহলে শয়তান ওই খাবারের ভাগ নিতে পারেনা '।ফলে খাবারের পরিমাণ কম হলেও তা তার জন্যে কল্যাণ বয়ে আনে।
অনুরূপভাবে বান্দর যখন ঘরে প্রবেশ করে তখন যদি বিসমিল্লাহ বলে ঘরে প্রবেশ করে তাহলে শয়তান তার সঙ্গে ঘরে প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে প্রতিটি কাজের পূর্বে বান্দা যদি বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে তাহলে শয়তান তার থেকে দূরে থাকে ফলে আল্লাহ তাঁর উৎসব কাজে বরকত দান করেন।
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - কুরআনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের সাথে সম্পর্ক নিয়ে বলেছেন, আল্লাহতালা এ কিতাবটি অনেক মানুষকে উপরে উঠাবেন আবার অনেক মানুষকে নিচে নামাবেন।( মুসলিম )
অর্থাৎ যারা কুরআনুল করীম অনুসরণ করবে তাদের জন্য হবে বরকতময় আর যারা দূরে রাখবে তাদের জন্য হবে মঙ্গল জনক হবার কারন।
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - সকালবেলা কাজ শুরু করা
সকালবেলা কাজ শুরু করা সেক্ষেত্রে কারো অফিস যদি দেরীতে হয় তাতে সমস্যা নেই নিজের বাড়ির কাজ দিয়ে হলেও সকাল-সকাল কাজ শুরু করা উত্তম। কারণ সকাল বেলার কাজে আল্লাহতালা বরকত দান করেন। এ বিষয়ে নবী করিম (সাঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন হে আল্লাহ আপনি আমার উম্মতদের সকালবেলা বরকত দান করবেন।
অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, আপনি বলেছেন আমার উম্মতের জন্য সকালবেলা বরকত দেয়া হয়েছে। সুতরাং কেউ যদি ঘুমিয়ে সকাল কাটায় তাহলে তার কাজে কিভাবে বরকত আসবে। তাই আল্লাহর নাম নিয়ে সকাল-সকাল কাজ শুরু করলে সে কাজে বরকত ও কল্যাণ চলে আসে।
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল - আল্লাহর উপর ভরসা করা
রিজিক বৃদ্ধির চাবি বা আমল হল আল্লাহর উপর ভরসা করা। বান্দা আল্লাহর উপর যত বেশি ভরসা করবে আল্লাহ ততবেশি দান করবেন। অন্যদিকে আল্লাহর প্রতি যত বেশি ভরসা কমবে আস্থা কমবে সে ততো বেশি লাঞ্ছিত অপমানিত হবে।
হাদীসে এসেছে নবী করিম (সাঃ) বলেছেন আল্লাহর উপর যেই মাপের আস্থা বা ভরসা রাখা দরকার তোমরা যদি সেই পরিমাপে আস্থা বা ভরসা রাখতে পারো তাহলে আল্লাহ তাআলা পাখিকে যেভাবে রিজিক দেন তোমাদেরও সেইভাবে রিজিক দিবেন।
আমাদের শেষ কথা
ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল সম্পর্কে পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি আপনার রিজিক বৃদ্ধি করতে চান তাহলে ইসলামের রিজিক বৃদ্ধির আমল গুলো নিজের জীবনে প্রতিফলিত করতে পারেন। এতে করে আল্লাহ অবশ্যই আপনার রিজিক বৃদ্ধি করে দিবেন।
fasttechit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url