কিডনি রোগের কারণ - কিডনি রোগ থেকে মুক্তির উপায়

কিডনি হলো মেরুদন্ডী প্রাণীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই কিডনি বা বৃক্ক দ্বারা মূলত আমাদের দেহের রক্ত ছেঁকে নেওয়ার কাজ করা হয়ে থাকে। আমাদের শরীরের সমস্থ রক্ত দিনে প্রায় ৪০ বার এই কিডনির মধ্য গিয়ে পরিশোধিত হয়। কাজেই কোন কারণে এই কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিলেই হতে পারে নানান জটিলতা।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কিডনি রোগ কেন হয়, কিডনি রোগের কারণ কি আর কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় ই বা কি? তাই বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথে থাকুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কিডনি রোগের কারণ - কিডনি রোগ থেকে মুক্তির উপায়

কিডনি রোগের কারণ | কিডনি রোগ কেন হয়

কিডনি সাধারণত প্রস্রাবের নালী, প্রস্রাবের থলি এবং প্রস্রাবের পথ এই সমস্থ কাজ হলো কিডনি করে থাকে। আর এই সকল প্রক্রিয়ায় কোন সমস্যা দেখা দিলে তাকে কিডনি রোগ বলা হয়। কিডনি এক ধরনের হরমোন উৎপন্ন করে যার মাধ্যমে রক্ত তৈরি হয়।

আরও পড়ুনঃ ডার্ক চকলেট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ডার্ক চকলেট খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

আর এই এরিথ্রোপোয়েটিন হরমোনের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে কিডনি থেকে। কোন কারণে যদি কিডনি কাজ বন্ধ করে দেয় বা কিডনি রোগ হয় তাহলে শুরু হয় নানা জটিলতা। যেমন

  1. রক্ত উৎপন্না হতে পারেনা
  2. রক্তাল্পতা দেখা দেয়
  3. রক্ত ছেঁকার কাজ বন্ধ হিয়ে যায়
  4. রক্তের ময়লা মস্তিষ্কে, হার্টে ও হাড়ে চলে যায়
  5. এতে করে প্রস্রাব কমে যায়
  6. উচ্চরক্তচাপ এর মত সমস্যা শুরু হয়

এবার জানা যাক এই কিডনি রোগ কেন হয় বা কিডনি রোগের কারণ কি হতে পারে।

কিডনি রোগের কারণ এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কারণ জানা সম্ভব হয়না।  তবে যেগুলো জানা যায় তার মধ্যে কিডনি রোগের কারণ এর তালিকায় বিশ্বে এক নাম্বারে আছে ডায়াবেটিস। কিন্তু বাংলাদেশে এটি দুই নাম্বারে আছে।

কিডনি রোগের কারণ এর তালিকায় বিশ্বে দুই নাম্বারে আছে উচ্চ রক্তচাপ যা আমাদের দেশে আছে তিন নাম্বারে। আমাদের দেশে এক নাম্বার অবস্থানে রয়েছে নেফ্রাটাইসিস। এর ফলে অনেকের প্রস্রাবের নালীতে পাথর হয়ে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। অনেকের বংশগতভাবে হয়ে থাকে কিডনি রোগ।

অন্যদিকে আমাদের অসচেতনতা কিডনি রোগের কারণ এর তালিকায় অনেক উপরে রয়েছে। কিডনি রোগ কেন হয় এর উত্তরে বড় একটি কারণ হলো আমরা যে ব্যাথার ওষুধ খেয়ে থাকি কোন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটা খুব মারাত্বক।

আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন কিডনি রোগ কেন হয় এবং কিডনি রোগের কারণ এর তালিকায় শুরুর দিকে ও খুব কমন কোন বিষয়গুলো রয়েছে। এই সকল বিষয় থেকে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কিডনি রোগের উপসর্গ কি কি | কিডনি রোগের লক্ষণ

কিডনি রোগকে নিরব ঘাতক বলা হিয়ে থাকে৷  কারণ এই রোগ হলে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষতি হবার পরে বোঝা বা জানা যায়। তাই এর ভয়াবহতা অনেক। তার পরেও কিডনি রোগের উপসর্গ কি কি ভা কিডনি রোগের লক্ষণ কিছু পাওয়া যায়। এই বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো

  1. হঠাৎ করে শরীর ফুলে যেতে পারে এববগ সেই ফোলাটা শুরু হয় মুখ থেকে।
  2. প্রস্রাব আগের চেয়ে কমে যাবে কিংবা অনেকের ক্ষেত্রে বেড়ে যেতে পারে, বিষেশ করে যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত।
  3. প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে এবং প্রস্রাবের রঙ এর পরিবর্তন হওয়া
  4. রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে, সেই সাথে বমি হওয়া, ক্ষুধামন্দা দেখা দেওয়া এবং খাবারে অনিহা বেড়ে যাওয়া
  5. শরীরে চুলকানি বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে কোন কাজে আগ্রহ না থাকা
  6. কোমড়ের দুই পাশে যদি ব্যথা হয় আবার অনেকের ক্ষেত্রে এই ব্যথা পেটেও হতে পারে
  7. উচ্চরক্তচাপ দেখা দিলেও সচেতন হতে হবে

আপাত দৃষ্টিতে কিডনি রোগের লক্ষণ বা কিডনি রোগের উপসর্গ কি কি হতে পারে সেই বিষয়ে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন বলে আশা করছি। এবার আমরা জানার চেষ্টা করব কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ বা কিডনি বোঝার উপায় কেমন হতে পারে।

কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ | কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়

কিডনি রোগের লক্ষণ বা কিডনি রোগের উপসর্গ কি কি হতে পারে সেই সকল বিষয়ে আপনি কিছুটা ধারণা আগেই পেয়েছেন। এবার জানার পালা কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ বা কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় কি হতে পারে। আপনি কিভাবে বুঝবেন কিডনি সমস্যা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে কি হয়

কিডনি সমস্যা হলে কিছু বিষয়ে রোগী সাফার করেন তার কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হলো

কিডনির রোগ হলে এরিথ্রোপোয়েটিন নামক হরমোন উৎপন্ন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কারণ এই হরমোনের প্রায় ৯০ ভাগ পাওয়া যায় কিডনি থেকে। ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, খাবারে অরুচি চলে আসে, শরীর অনেক দূর্বল হয়ে যায়, হার্ট ফেইলিউর হয়।

অন্যদিকে এই সময় কিডনি রক্ত ছেঁকে নিতে পারেনা বলে রক্তের বর্জ্য মস্তিষ্কে, হাড়ে, ও হার্টে জমে যায়। এর ফলে প্রস্রাব কমে যায়, উচ্চরক্তচাপ বেড়ে যায় এবং শরীর ফুলে যায়। আর কিছু বিষয় বিগ্ন হবার কারণে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে কিডনির ছাকনি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রোটিন বেড় হয়ে যায়।

তাই বুঝতেই পারছেন কিডনি রোগের লক্ষণ বা কিডনি রোগের উপসর্গ কি কি জানার পরে যখন দেখবেন কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ বা কিডনি সমস্যা বোঝার উপায় শুরু হয়েছে তখন কোনভাবেই সময় নষ্ট না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

কিডনি ভালো রাখার উপায় | কিডনি রোগ থেকে মুক্তির উপায়

কিডনি ভালো রাখারা উপায় বা কিডনি রোগ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে আপনি যখন ৪০ বছরে পা দিবেন তখন একবার হলেও কিডনি পরীক্ষা করে নিবেন। যারা ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত আছেন তারা দুই একবার পরীক্ষা করলে বোঝা যায় কিডনিতে সমস্যা হয়েছে কিনা বা হবার ঝুকি কতটা রয়েছে৷

আরও পড়ুনঃ পেয়ারা পাতার উপকারিতা - পেয়ারা পাতা খাওয়ার নিয়ম

সাধারণত ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হবার ১৫ থেকে ২০ বছর পরে কিডনি রোগ হতে পারে৷ আবার অনেকের ক্ষেত্রে এর আগেও দেখা দিতে পারে কিডনি রোগ। অনেকের আবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রে থাকা সত্ত্বেও ৩০/৪০% মানুষের কিডনি ফেইলিয়র হতে দেখা যায়। তবে আশার বিষয় হলো দ্র্যত চিকিৎসা নিলে রোগী এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়।

কিডনি ভালো রাখার উপায় বা কিডনি রোগ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে আপনি যে কাজগুলো করতে পারেন নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
  • উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
  • নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ব্যথার ওষুধ বা এন্টিবায়োটিক খাওয়া যাবেনা
  • অল্প অবস্থাতেই চিকিৎসা নিতে হবে
  • পাথর যাতে ব্লক হতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে আগেই
  • প্রোস্টেট ব্লক থাকলে সেটি দূর করতে হবে দ্রুত
  • ডায়রিয়া বা বমি হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে
  • আপনার যদি প্রস্রাব কমে যায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। দ্রুত চিকিৎসা নিলে ভালো হয়
  • প্রসবকালীন জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। বিষেশ করে গ্রামে অদক্ষ্য দায়ী দিয়ে প্রসব করাবেন না
  • প্রস্রাবের ইনফেকশন যখন রক্তে চলে আসে তখন এটি কিডিনিকে ক্ষতি করে তাই আগেই ডাক্তার দেখাতে হবে।

আশা করি বুঝতে পেরেছেন কিডনি ভালো রাখার উপায় বা কিডনি রোগ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে আপনি কি কাজগুলো করতে পারেন। এই নিয়মগুলো মেনে চলুন সুস্থ্য থাকুন।

আমাদের শেষ কথাঃ কিডনি রোগের কারণ - কিডনি রোগ থেকে মুক্তির উপায়

আমাদের দেশে কিডনি রোগীর সংখ্য অনেক রয়েছে। আমাদের অসচেতনতা আর কিছু ভুলের কারণে আমাদের বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই কিডনি রওগের কারণ এবং কিডনি রোগ থেকে মুক্তির উপায় জেনে সেইভাবে আপনি চলতে পারেন৷ কিডনি রোগের উপসর্গ বা কিডনি রোগের লক্ষণ জেনে সহজেই বুঝতে পারবেন কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

fasttechit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url