লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
লালশাক অতি উপাদেয় একটি সবজি। এতি বেশ সুস্বাদু। রঙিন সবজি হওয়ায় শিশুরাও এটি পছন্দ করে। আমাদের দেশের প্রায় সব অঞ্চলে লালশাক চাষ হয়। লাল শাকের উৎপত্তি দক্ষিণ আমেরিকার দিকে।
লালশাক আমরা প্রায়ই খাই। কিন্তু লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কী আমরা জানি সেভাবে? চলুন লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক আজ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
- লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম
- লাল শাকের ইংরেজি নাম
- লাল শাকের পুষ্টি উপাদান
- লাল শাকের উপকারিতা
- লাল শাকের অপকারিতা
- আমাদের শেষ কথা
লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম
লালশাক পছন্দ করি অথচ লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম জানা নেই এমন মানুষ নেহাতই কম নয়। লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম হয়তো আমরা অল্প কজন মানুষই জানি। লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার সাথে সাথে কিন্তু এই জিনিস গুলোও জেনে রাখা ভালো। লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Anaranthus oleraceus.
লাল শাকের ইংরেজি নাম
প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন লালশাকের ভাজি পাতে ওঠে,কিন্তু জনপ্রিয় এই লাল শাকের ইংরেজি নামটাই জানা নেই! ধরুন কখনো দেশের বাইরে গিয়েছেন, লালশাক খাওয়ার ইচ্ছে হলো। তখন কিন্তু আপনাকে এই লাল শাকের ইংরেজি নামের ওপরই ভরসা করতে হবে! তাছাড়াও পছন্দের সবজির ব্যাপারে বেসিক জিনিস গুলা জেনে রাখা তো কর্তব্যই। লাল শাকের ইংরেজি নাম হলো Red amaramth.
লাল শাকের পুষ্টি উপাদান
লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে হলে আগে লাল শাকের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানতে হবে। লাল শাকের পুষ্টি উপদান জানলে তবে লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা কতখানি তা পরিষ্কার হওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা
লালশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ,বি, সি, ক্যালসিয়াম ও আয়রণ রয়েছে। তাছাড়া এতে অ্যামাইনো এ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও ফাইবার বা আঁশ থাকে।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকে রয়েছে প্রোটিন ৫.৩ গ্রাম, শ্বেতসার ৫.০ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ১০ গ্রাম আঁশ, ১.৬ গ্রাম খনিজ লবণ, ০.১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-১ ও ০.১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২। তাছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকে ৪৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ৩৭৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৮৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২৫.৫ মিলিগ্রাম আয়রন, ১১৯৪০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ৪৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে।
এতো জেনে নিলাম লালশাকের পুষ্টি উপাদান। এখন লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পালা।
লাল শাকের উপকারিতা
লাল শাকের উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হবেন। লাল শাকের উপকারিতার তালিকা আসলে বিরাট। এটি যেনন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ। লা লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে বসলে এটি যে কতটা উপকারী তা জেনে বিস্মিত না হয়ে উপায় থাকে না।
লাল শাকের অসংখ্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে লালশাকে অন্যান্য শাকসবজি যেমন বাঁধাকপি ফুলকপি পালং শাক ইত্যাদি তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ক্যারোটিন থাকে এই ক্যারোটিন আমরা জানি শরীরে ভিটামিন এ তৈরিতে অনেক বেশি কার্যকরী। ভিটামিন এ মূলত আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। চোখের দৃষ্টি ভালো রাখা ভিটামিন এ এর প্রধান কাজ এছাড়াও ত্বক,দাঁত,হাড়ের গঠন ও সুস্থতা রক্ষায় ভিটামিন এ কাজ করে।
আরও পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার উপকারিতা
শরীরে ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ সৃষ্টি হয় এতে দৃষ্টিশক্তি কমে যায় শিশু বয়সে মূলত এই রোগ বেশি হয়। ভিটামিন এ এর অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে রাতকানা রোগ থেকে চোখের বড় বড় রোগের সৃষ্টি হতে পারে। লাল শাকে বিদ্যমান ভিটামিন এ রেটিনার শক্তি বাড়িয়ে দৃষ্টি শক্তির উন্নতিতে কাজ করে।
বুকের দুধে ভিটামিন ‘এ’ তৈরির জন্য স্তন্যদানকালে প্রসূতি মায়ের বেশি করে গাঢ় ও সবুজ রঙের শাক-সবজি খাওয়া উচিত। তাই শিশু ও কিশোর-কিশোরীসহ গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যারোটিন সমৃদ্ধ লালশাক রাখতে বলা হয়।
লালশাক থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। ভিটিামিন ‘সি’ আমাদের দাঁত, মাড়ি ও পেশি মজবুত করে। তাছাড়া সর্দি-কাশি ও ঠান্ডার কবল থেকে রক্ষা করে এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন ‘সি’ ক্যালসিয়াম ও আয়রণের বিপাকেও সহায়তা করে।
পালংশাক, মুলাশাক, সরিষাশাক, লাউশাক ও ধনেপাতার চেয়ে লালশাকে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। মানবদেহের হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গর্ভবতী মহিলারা যদি ক্যালসিয়ামের অভাবে ভোগেন তাহলে এর প্রভাব শিশুদের ওপর দেখা যায়। ক্যালসিয়ামের অভাবে শিশুদের হাড়ের কাঠামো দুর্বল, ছোট ও বাঁকা হয়, দাঁত দেরীতে ওঠে এবং দাঁ হয় অপুষ্ট।
তাছাড়া শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় প্রসূতি মায়ের খাবারেও যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকা আবশ্যক। তাই শিশু, কিশোর-কিশারী এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য লালশাক অত্যন্ত উপকারী।
আবার লালশাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে। দেহে আয়রণের অভাব হলে শরীরে অপুষ্টিজনিত রক্তশূন্যতা রোগ দেখা দেয়। ছোট ছেলে-মেয়েরা এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েরা অতি সহজেই এ রোগের শিকার হয়। লালশাক দেহের রক্তপ্রবাহে উন্নতি ঘটায়। নিয়মিত লালশাক খেলে রক্ত পরিশোধিত হয়। লালশাক শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই রক্তশূন্যতা রোধ করতে লালশাক খুবই উপকারী।
লালশাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকার কারণে এটি দেহের হজম, পরিপাক ও বিপাক প্রক্রিয়ার কাজে সহায়তা করে,এটি কোলন পরিস্কারেও ভূমিকা রাখে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। লালশাক রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করতেও লালশাকের ভূমিকা রয়েছে। চুলের স্বাস্থ্যের জন্য লালশাক অনেক উপকারী। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলে মিনারেল ও পুষ্টি জোগায়। তাছাড়া নিয়মিত লালশাক খেলে কিডনির কার্যকারিতা ভালো থাকে। লালশাকের উপকারিতা এবং অপকারিতা জানতে এসে এর উপকারী গুন গুলো সত্যিই বিস্ময় সৃষ্টি করছে। এতো এতো উপকারী গুন একই খাদ্য উপাদানে,বিষয়টি অসাধারণ।
লাল শাকের অপকারিতা
লাল শাকের অপকারিতা আসলে তেমন কিছু নেই, তবুও নিয়ম মেনে না খেলে লাল শাকের অপকারিতা ও সামনে আসে।লালশাকের উপকারিতা এবং অপকারিতার ক্ষেত্রে বিষয় গুলো জেনে রাখা জরুরী ,যাতে ভবিষ্যতে এগুলো মাথায় থাকে এবং ভুল না হয়।
শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, অতিরিক্ত আয়রন রাতের জন্য ভালো না এতে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। হার্টের সমস্যা বা লিভারের সমস্যা যাদের আয়রনের মাত্রা বেশি থাকায় এই রোগীদের রাতে লাল শাক না খাওয়াই ভালো।
আরও পড়ুনঃ ডুমুর ফল এর উপকারিতা ও অপকারিতা
লাল শাকে প্রচুর ফাইবার থাকে। ফাইবার শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কিন্তু রাতে না খাওয়াই ভালো কারণ, ইনটেসটাইম অর্থাৎ খাবার হজমকারী জরুরী নালিবিশিষ্ট অঙ্গ বেশি রাতে কাজ করে না।
গর্ভাবস্থায় লালশাক খুবই উপকারী কিন্তু সবার তা হজম হয় না। শুরু থেকেই যারা অ্যাসিডিটি বা বমির সম্যায় বেশি ভোগেন, তারা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, শাক, ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার বাদ রাখবেন।
আমাদের শেষ কথাঃ লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পর এর পুষ্টিগুণ বিচার করলে দেখাই যায় কিছু ক্ষেত্র বাদে সব বয়সের মানুষের জন্য এটি খুবই উপকারী। আমাদের খাদ্য তালিকায় এর স্থান ওপরের দিকেই হওয়া উচিত। এতে করে স্বাদের সাথে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাওয়া যাবে। শরীরে গঠন এবং সুস্থতা বজায় রাখতে লাল শাক অবশ্যই খাওয়া জরুরি
fasttechit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url