লিভার সিরোসিস কি এবং কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়
সারা বিশ্বসহ আমাদের দেশেও বর্তমানে লিভার সিরোসিস রোগীর সংখ্যা অনেক। প্রতিদিন অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন এই জটিল রোগে। লিভার সিরোসিস কি এবং কেন হয় আর লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় ই বা কি সেই বিষয়ে অনেকেরই অজানা।
তাই আজকের পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করব লিভার সিরোসিস নিয়ে। বিষেশ করে লিভার সিরোসিস কেন হয়, লিভার সিরোসিসের লক্ষণ, লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় কি ইত্যাদি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ লিভার সিরোসিস কি এবং কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়
- লিভার সিরোসিস মানে কি
- লিভার সিরোসিস কি এবং কেন হয় | লিভার সিরোসিস কেন হয়
- লিভার সিরোসিসের লক্ষণ
- লিভার সিরোসিস হলে করনীয়
- লিভার সিরোসিস কি ভালো হয়
- লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার
- লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়
- আমাদের শেষ কথা
লিভার সিরোসিস মানে কি
লিভার সিরোসিস মানে কি এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জানা যায় যে লিভারের নানা রোগের কারণে লিভার কোষগুলো যখন আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারেনা তখন তাকে লিভার সিরোসিস বলে।
লিভার সিরোসিস কি এবং কেন হয় | লিভার সিরোসিস কেন হয়
- লিভার সিরোসিস একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগ হলে সাধারণত লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বা লিভার প্রতিস্থাপন করা ছাড়া পুরোপুরি সারে না।
- এখন কথা হলো এই লিভার সিরোসিস কি এবং কেন হয় বা লিভার সিরোসিস কেন হয় এই বিষয়ে কিছুটা জানা প্রয়োজন। তবে এই বিষয়ে জানা যাক
- লিভারের বিভিন্ন রোরের কারণে যখন লিভারের কোষগুলো এমনভাবে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয় যে লিভার আর কাজ করতে পারেনা, লিভারের রোগের সেই পর্যায়কে লিভার সিরোসিস বলা হয়।
- লিভারে এই প্রদাহ বা হেপাটাইটিস এর মূল কারণ হচ্ছে ভাইরাস। বিষেশ করে এ,বি,সি,ডি এই ভাইরাসগুলো লিভারের ভাইরাস। এগুলো লিভারে আক্রমণ করে লিভারের ক্ষতি করে থাকে।
- এছাড়াও লিভারে যদি মাত্রাতিরিক্ত চর্বি জমে তাহলেও লিভারের এই রোগ হতে পারে। আবার অন্য কোন ভাইরাস যদি দীর্ঘদিন ধরে আক্রমণ করে সেক্ষেত্রেও লিভার সিরোসিস হতে পারে। বিষেশ করে বি ও সি ভাইরাস লিভারের বেশি ক্ষতি করে।
আশা করছি লিভার সিরোসিস কি এবং কেন হয় বা লিভার সিরোসিস কেন হয় এই বিষয়ে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। এখন কাজ হলো লিভার সিরোসিসের লক্ষণ কি কি বা লিভার সিরোসিস হলে করনীয় কি এই বিষয়ে জানা।
লিভার সিরোসিসের লক্ষণ
লিভার সিরোসিস হলে তেমন কোন লক্ষণ আগে থেকে বোঝা যায়না। ফলে রোগী বুঝতে পারেননা তার লিভারে সমস্যা হয়েছে। তার পরেও লিভার সিরোসিসের লক্ষণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করা যায়৷ এর মধ্যে রয়েছে
আরও পড়ুনঃ কিডনি রোগের কারণ - কিডনি রোগ থেকে মুক্তির উপায়
- জন্ডিস হওয়া এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া সেই সাথে ত্বকেও হলুদ ভাব হওয়া
- শরীর অল্পতেই ক্লান্তি, অস্থিরতা ও দূর্বল অনুভব হওয়া। লিভার কাজ না করলে শরীরের বিপাকীয় কাজ ভালোভাবে হয়না। ফলে এই সকল সমস্যা দেখা দেয়।
- পেট ফাঁপা ও ব্যথা হওয়া অন্য একটি লক্ষণ। লিভারে সমস্যা হলে পেটে তরল জমা হয়ে থাকে ফলে পেট ফাঁপা বা ব্যথার মত সমস্যা দেখা দেয়।
- আপনার যদি অনেক বেশি রক্তক্ষয় হয় বা শরীরে কালশিটে দেখা দেয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ লিভার সিরোসিসের লক্ষণ এর মধ্যে এটাও একটি।
- লিভার যখন কাজ না করে তখন লিভারে টক্সিন জমা হয়ে থাকে। যার ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, বিভ্রাম দেখা দিতে পারে। এটিও একটি কারণ।
- এছাড়াও জ্বর জ্বর ভাব থাকা, দাঁতের মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্ত পরা, ঘন ঘন পেট খারাপ হওয়া ইত্যাদি।
আপনার শরীরে এই ধরণের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিন। লিভার সিরোসিসের লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনার হাতে সময় কম। এর ফলে লিভার ফেইলর, লিভার ক্যন্সার এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।
লিভার সিরোসিস হলে করনীয়
আপনার যদি লিভার সিরোসিস হয় তাহলে আপনার করনীয় কি হবে এমনটা ভাবছেন? আসলে ভাবার মতই বিষয়। যদিও লিভার সিরোসিস হলে সেটি আর ভালো হয়না কিন্তু আপনি যদি নিয়ম মেনে চলেন তাহলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো থাকা সম্ভব। তাহলে জানা যাক লিভার সিরোসিস হলে করনীয় কি?
আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে লিভার সিরোসিস হলে দ্রুত রোগী ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছেন কিনা। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেয়ে নিয়ম মেনে চললে লিভার সিরোসিস হলেও অনেকদিন ভালো থাকা সম্ভব। বাংলাদেশেও এখন অনেক ওষুধ তৈরি হচ্ছে তাই আপনি হাতের কাছেই সব ওষুধ পেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ হিট স্ট্রোক এর কারণ - হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়
অন্যদিকে কি কারণা লিভার সিরোসিস হয়েছে সেই কারণ পেলে সেই রোগের চিকিৎসা করার মাধ্যমে লিভার যেন খারাপের দিকে না যায় সেই ঝুঁকি কমানো যায়।
সম্ভব হলে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বা লিভার প্রতিস্থাপন করাতে পারেন। যদিও এটি অনেক ব্য্যবহুল একটি প্রক্রিয়া তবে আশা কথা আমাদের দেশেই এখন এই প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
সর্বোপরি আপনাকে নিয়মের মধ্যে আর সম্পূর্ণ রেস্টের মধ্যে থাকতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে যেন শরীরে পানি না আসে। পেটে বা শরীরে পানি আসা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। এর জন্য ভাতের সাথে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে।
লিভার সিরোসিস হলে করনীয় হিসেবে আপনার রোগীকে এই উপরের বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। সেই সাথে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের ফলোয়াপে থাকতে হবে। মূলত রোগীর সেবার জন্য এবং সবসময় পর্যবেক্ষণ করার জন্য সচেতন থাকতে হবে।
লিভার সিরোসিস কি ভালো হয়
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে লিভার সিরোসিস কি ভালো হয় না? কষ্টদায়ক হলেও সত্য লিভার সিরোসিস ভালো হয় না। তাই একমাত্র লিভার প্রতিস্থাপন করা হলো লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়।
আরও পড়ুনঃ কি খেলে দ্রুত ফর্সা হওয়া যায় - কি খাবার খেলে ফর্সা হওয়া যায়
তবে আশার কথা হলো নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যদি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন তাহলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো থাকা সম্ভব হয়। তাই হতাশ না হয়ে রোগীকে যত্নে রাখুন দেখবেন অনেকটা ভালো আছেন।
লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার
লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় বআ লিভার সিরোসিস হলে করনীয় হিসেবে আপনাকে যে বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার। এই ধরণের রোগীর জন্য সকল খাবার দেওয়া যায়না। কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় রাখলে এই ধরণের রোগীর জন্য ভালো হয়।
- তাহলে জানা যাক লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার তালিকা কি ধরণের হবে
- মাশরুম, স্পিরুলিনা অর্থাৎ প্রোটিন জাতীয় খাবার
- সকল প্রকার সবুজ শাকসবজি
- ফলের মধ্যে আঁশযুক্ত ফল
- সকল প্রকার মাছ এর মধ্যে তেলযুক্ত মাছ ও সামুদ্রিক মাছ
- হাঁস, মুরগি, কবুতর ও কোয়েল পাখির মাংস
- চর্বি ছাড়া গরু বা খাসির মাংস তবে পরিমাণমত
- খাবারে সালাদ বেশি রাখুন
- বাদাম খেতে পারেন
- গ্রীন টি ভালো কাজ দেয়
- পরিমাণমতো ভাত ও রুটি
- দুধের তৈরি টকদই, মাঠা, ঘোল, লাচ্চি, ঘি, মাখন ইত্যাদি
- প্রোবায়োটিক, আঁচার
- চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, চানাচুর, চা, কফি খেতে পারবেন
- ধুমপান, মদ্যপান, লবণ, বাজে তেল এবং বেশি শর্করা বাদ দিতে হবে।
লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়
লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় হলো একমাত্র লিভার প্রতিস্থাপন করা। যা এখন আমাদের দেশেই সম্ভব হচ্ছে। তবে এর ব্যয় আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যায়। তাই এটা সবাই করতে পারেন না।
তবে আপনি কিছু নিয়ম ও ওষুধ নিয়মিত নিলে এবং ভালো কোন ডাক্তারের ফলোয়াপে থাকলে দীর্ঘদিন ভালো থাকা যায়। এ জন্য লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে আপনাকে অনেক সচেতন হতে হবে। যেন এই রোগের আগেই আপনি প্রতিরোধ করতে পারেন। কেননা সিরোসিস একবার হয়ে গেলে এই রোগ আর কখনও ভালো হয়না।
আমাদের শেষ কথাঃ লিভার সিরোসিস কি এবং কেন হয় - লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়
আমাদের আজকের পোস্টে আপনাকে জানানোর চেষ্টা করেছি লিভার সিরোসিস কি এবং কেন হয়। লিভার সিরোসিস কেন হয়, লিভার সিরোসিসের লক্ষণ কি কি, লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় ই বা কি হতে পারে, লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার তালিকা কেমন হবে ইত্যাদি বিষয়।
তাই আশা করছি আপনি আমাদের সাথে অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন এবং আপনার বাসায় যদি এমন কেউ থাকেন যার লিভার সিরোসিস হয়েছে তার যত্ন নিতে পারবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সকল প্রকার রোগ থেকে মুক্তি দান করুন। আমিন
fasttechit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url