পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কখন কিভাবে আসল

নামাজ পবিত্র কুরআনের মধ্যে ৮২ জায়গায় ৮২ বার বলা হয়েছে নামাজ কায়েম করার জন্য। নামাজ সম্পর্কে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন নামাজ হলো বেহেস্তের চাবি। তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কখন কিভাবে আসল সেই বিষয়ে জানা প্রয়োজন। এখন মুসলিম সম্প্রদায় যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন সেই নামাজের ইতিহাস কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের আজকে পোস্টে আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কখন কিভাবে আসল তার ইতিহাস সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কখন কিভাবে আসল

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কখন কিভাবে আসল - ফজরের নামাজ

ফজরের নামাজ হলো দিনের শুরুতে প্রথম নামাজ। এই নামাজ ভোরবেলা পড়া হয়ে থাকে।  দুই রাকাত ফরজ নামাজের আগে দুই রাকাত সুন্নত রয়েছে। জানা যায় হযরত (আঃ) কে যখন পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয় তখন পৃথিবী ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন।  এমন পরিবেসে এসে আদম (আঃ) ভয়ে কান্না করতে থাকেন।

আরও পড়ুনঃ ইসলামে রিজিক বৃদ্ধির আমল

এরপর ভোরবেলা যখন আলো আসতে শুরু করে তখন তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। পরবর্তীতে এই দুই রাকাত নামাজ বান্দার জন্য আল্লাহ ফরজ করেছেন। এভাবেই ফজরের দুই রাকাত নামাজ আসে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কখন কিভাবে আসল - জোহরের নামাজ

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে দিনের মধ্য প্রহরে যে নামাজ আদায় করা হয় তাকে জোহরের নামাজ বলা হয়। জোহরের নামাজ কিভাবে আসলো কখন আসলো এই বিষয়টি জানব।

মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ) আমাদের মুসলমান নাম দেন। আল্লাহ এই নবীকে অনেকভাবে পরীক্ষা করেছেন। তার মধ্যে একটি বড় পরীক্ষা ছিল তার নিজের সন্তানকে কুরবানীর আদেশ। এই সময় তিনি নিজের সন্তানকে কোরবানি দিতে মনবালনা হারানোর কারণে এক রাকাত, ওদের মায়া মন থেকে দূর করতে পারার জন্য এক রাকাত, হযরত ইসমাইল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশ পালনে সম্মত হওয়ার জন্য একা রাকাত এবং আইলে পরিবর্তে কি দুম্বা কোরবানি হওয়ার জন্য এক রাকাত মোট ৪ রাকাত নামাজ আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে পড়েন। আর এই চার রাকাত নামাজে বান্দার উপর জোহরের ফরজ নামাজ হিসেবে আরোপিত হয়েছে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কখন কিভাবে আসল - আসরের নামাজ

আসরের নামাজ কখন কিভাবে এসেছে এ বিষয়ে কয়েকটি মতবাদ রয়েছে। নিম্নে এ মতবাদ গুলো উল্লেখ করা হলো

আরও পড়ুনঃ কুকুর পালন সম্পর্কে ইসলামের বিধান

অনেকের মতে হযরত ইউনুস (আঃ) সামুদ্রিক মাছের পেটে অন্ধকারে আবদ্ধ ছিলেন। অন্ধকার থেকে মুক্তিলাভের পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তিনি চার রাকাত নামাজ পড়ে। পরবর্তীতে সেই চার রাকাত নামাজ আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার উপর আসরের ফরজ নামাজ হিসেবে আরোপিত হয়।

অন্যদিকে অনেকের মতে হযরত উযাইর (আঃ) ১০০ বছর মৃত অবস্থায় কবরে থাকার পর পুনরায় জীবিত হলে আল্লাহতালা তাকে জিজ্ঞাসা করেনি তুমি কতদিন মৃত অবস্থায় ছিলে। উত্তরে তিনি বলেন একদিন অথবা একদিনের কিছু বেশি সময়। তখন আল্লাহ তাকে জানান না তুমি ১০০ বছর মৃত অবস্থায় ছিল। একথা জানার পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তিনি চার রাকাত নামাজ আদায় করেন যা পরবর্তীতে আল্লাহর হুকুমে বান্দার উপর আসরের ফরজ নামাজ হিসেবে আরোপিত হয়।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কখন কিভাবে আসল - মাগরিবের নামাজ

মাগরিবের নামাজ কখন কিভাবে এসেছে এ ব্যাপারে কয়েকটি মতবাদ পাওয়া যায় নিম্নে এই মতবাদ গুলো উল্লেখ করা হলো।

প্রথম মতবাদ ঠিক হলো যখন দাউদ (আঃ) এর দোয়া আল্লাহ কবুল করলেন তখন তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তিন রাকাত নামাজ আদায় করেন। পরবর্তীতে সেই তিন রাকাত নামাজ বান্দার উপর মাগরিবের ফরজ নামাজ হিসেবে আরোপিত হয়।

হযরত ঈসার (আঃ) নিজে খোদা না হওয়ার নিদর্শনস্বরূপ এক রাকাত, মা মরিয়ম খোদা না হওয়ার নিদর্শনস্বরূপ এক রাকাত এবং আল্লাহ তালাকে খোদা শিকারি নিদর্শনস্বরূপ এক রাকাত তিনটি কারণে মোট তিন রাকাত নামাজ আদায় করেন। পরবর্তীতে আল্লাহ এই তিন রাকাত নামাজ বান্দার উপর মাগরিবের ফরজ নামাজ হিসেবে আরোপিত করেন।

অন্য একটি মতবাদ থেকে জানা যায় হযরত ইউসুফ (আঃ) এর দেওয়া জামা হযরত ইয়াকুব (আঃ) তিনবার চোখে ঘষলেন এবং তিনি তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন। এরপর ইউসুফ (আঃ) জীবিত অবস্থায় দেখতে পেলেন এবং তিনি ইসলামের অটল আছেন এ অবস্থা দেখতে পেলেন। এই তিন কারণে তিনি তিন রাকাত নামাজ আদায় করেন। যা পরবর্তীতে আল্লাহ তালাহ বান্দার উপর মাগরিবের ফরজ নামাজ হিসেবে আরোপিত করেন।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কখন কিভাবে আসল - এশার নামাজ

এই নামাজের ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি মতবাদ পাওয়া যায়। নিম্নে এগুলো উল্লেখ করা হলো

হযরত মূসা (আঃ) যখন নীলনদ অতিক্রম করে ফেরাউন এবং তার সৈন্যদের থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তিনি চার রাকাত নামাজ আদায় করেন। যা পরবর্তীতে আল্লাহ বান্দার উপর এশার ফরজ নামাজ হিসেবে আরোপিত করেন।

আরও পড়ুনঃ কবরের আজাব থেকে মুক্তির উপায়

অন্য একটি মত হলো হযরত মূসা (আঃ) ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক রাকাত, নীলনদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক রাকাত, ফেরাউনের সৈন্যদল নীলনদে ডুবে যাওয়ার জন্য এক রাকাত এবং অবাধ্য ইসরায়েলের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক রাকাত এই মোট চার রাকাত নামাজ পড়েন। যা পরবর্তীতে আল্লাহ বান্দার উপর এশার ফরজ নামাজ হিসেবে আরোপিত করেন।

অন্য একটি মতবাদ আছে যেটি অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ।  এশার নামাজ কোন নবী রাসূল পরেন নি। এই নামাজ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর আরোপিত করা হয়েছে। মানে উম্মতে মোহাম্মদীর উপর শুধু এশার নামাজ আরোপিত করা হয়েছে যা অন্য কোন নবীর অনুসারীরা পড়েননি।

আমাদের শেষ কথাঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কখন কিভাবে আসল

ইসলাম কত সুন্দর ও শান্তিময় একটি ধর্ম। এই জীবন ব্যবস্থা যদি কেউ মেনে চলেন তাহলে তার কখনও কোন ক্ষোভ বা আক্ষেপ থাকবেনা। বরং আমরা যে শেষ নবীর উম্মত হতে পেরেছি এ জন্য আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় মত নিয়মিত পড়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

fasttechit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url