রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঝিম ধরা, ক্ষুধামান্দ্য ও দ্রুত হৃৎস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা যায়।
যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনেক কম হয়, তবে রক্তাল্পতা বা এর চেয়েও মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়
- রক্তের হিমোগ্লোবিন কি
- রক্তের হিমোগ্লোবিনের কাজ কি
- রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি করে কোনটি
- রক্তের হিমোগ্লোবিন কত থাকলে ভালো
- রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর উপায়
- রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়
- হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয়
- হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ
- কি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে । রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ
- আমাদের শেষ কথা
রক্তের হিমোগ্লোবিন কি
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় তা জানা খুবই জরুরি, শুরুতে জানব রক্তের হিমোগ্লোবিন কি।
হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের একটি প্রয়োজনীয় প্রোটিন, মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় একে মেটালোপ্রোটিনও বলা হয়ে থাকে। এটি আমাদের রক্তের লোহিত কণিকায় থাকে এবং রক্তের মাঝে প্রয়োজনীয় ঘনত্ব বজায় রাখে। হিমোগ্লোবিনের জন্যে রক্ত যেমন ঘন হয়, তেমনি লালও হয়। রক্তের অন্যান্য উপাদান সচরাচর বর্ণহীন হয়ে থাকে, হিমোগ্লোবিনই রক্তকে লাল করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ক্যান্সার কেন হয় - ক্যান্সার থেকে মুক্তির উপায়
হিমোগ্লোবিন আমাদের দেহে দুই ধরণের প্রোটিন গঠনে ভূমিকা রাখে বলে জানিয়েছে মেডিকেল সায়েন্স। এর একটি হচ্ছে টারশিয়ারী আর অন্যটি হচ্ছে কোয়াটার্নারী। উভয় ধরণের প্রোটিনই শরীরের জন্যে দরকারি। আর এসব প্রোটিনের স্থায়িত্ব প্রদান করার জন্যে হিমোগ্লোবিন রক্তের মাঝে আলফা হেলিক্স নামের এক ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপন্ন করে থাকে।
রক্তের হিমোগ্লোবিনের কাজ কি
রক্তের হিমোগ্লোবিনের কাজ কি জেনে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় তা জানার পথে আমরা আরও এগিয়ে যাব।
আমরা আগেই জেনেছি হিমোগ্লোবিন বর্ণহীন রক্তকে লাল করে থাকে। সেই সাথে রক্তে থাকা নানা রকম উপাদানের পর্যাপ্ততাও নিশ্চিত করে থাকে। তবে হিমোগ্লোবিনের মূল কাজ শরীরে অক্সিজেন পরিবহণ করা। এটি মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে যেসব সমস্যা হয় তার মাঝে প্রধাণতম বিষয়টি হচ্ছে অক্সিজেন স্বল্পতা।
আমরা যখন বাতাস থেকে নিশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন গ্রহণ করি, তখন এটি প্রথমে আমাদের ফুসফুসে যায়। আর ফুসফুস থেকে এই অক্সিজেন শরীরের প্রতিটি টিস্যুতে, প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পরিবহণের দায়িত্বটি পালন করে হিমোগ্লোবিন।
আরও পড়ুনঃ লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়
শুধু তাই নয়, এই হিমোগ্লোবিনই অক্সিজেনের সাথে কার্বণ ডাই অক্সাইড বিনিময় করে। অর্থাৎ, ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে শরীরে পাঠায় আর শরীর থেকে বিষাক্ত কার্বণ ডাই অক্সাইড নিয়ে ফুসফুসে পাঠিয়ে দেয়। অতপর ফুসফুস সেটাকে আমাদের নিশ্বাস ফেলার মাধ্যমে বাইরে পাঠিয়ে দেয়।
সুতরাং, আমরা বুঝতে পারছি যে আমাদের রক্তের অক্সিজেন সরবরাহের সঙ্গে হিমোগ্লোবিনের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই, রক্তে যদি কখনো এই লোহিত অনু ধারণকারী পদার্থটি কমে যায়, তবে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। আর তখন আমরা অ্যানিমিয়াসহ নানা রকম শারীরিক সমস্যার সন্মুখীন হই।
রক্তে কোনও দূষিত পদার্থ দেখা দিলে হিমোগ্লোবিন সেটাকে পরিস্কার করে অর্থাৎ রক্তে যে কোন ধরণের ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রণে বাধা প্রদান করে। এমনকি, আমাদের শরীরে যত ধরণের বিষাক্ত গ্যাস জমা হয়, হিমোগ্লোবিন সেগুলোকে শরীরের বাইরে পরিবহণেও সহযোগীতা করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ কিডনি রোগ থেকে মুক্তির উপায়
মানুষের দেহের রক্ত কণিকার ৯৬ থেকে ৯৭ ভাগই হয়ে থাকে হিমোগ্লোবিনের প্রোটিন অংশ। আর রক্তের মোট ওজনের (পানিসহ) ৩৫ ভাগই দখল করে থাকে এই হিমোগ্লোবিন। আমাদের শরীরে থাকা প্রতি ১ গ্রাম হিমোগ্লোবিন বাতাস থেকে প্রতিবার ১.৩৬ মিলিলিটার, কখনো কখনো তার চেয়ে কিছুটা বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। যারফলে, শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ, বিশেষ করে রক্তে এর পরিবহণের মাত্রা প্রায় ৭০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
আমাদের শরীরের ৯৭ ভাগ অক্সিজেন ফুসফুস থেকে হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে শরীরের নানা অংশে সরবরাহ হয়ে থাকে। যে ৩ ভাগ বাকী থাকে, তা রক্তের প্লাজমায় মিশে যায়। হিমোগ্লোবিন রক্তের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ থেকে উর্ধ্বে ১০০ বার পর্যন্ত অক্সিজেন মুভ করাতে পারে।
ফুসফুসের যেখানে অক্সিজেনের লেবেল অত্যন্ত বেশি থাকে, হিমোগ্লোবিন খুব সুন্দরভাবে সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক করে দেয়। অর্থাৎ, যে স্থানে অক্সিজেন বেশি সেখান থেকে বাড়তি অক্সিজেন নিয়ে যেখানে কম সেখানে পৌঁছে দেয়। হিমোগ্লোবিনের প্রতিটি অনুর ৪টি আয়রণ পরমাণু থাকে। আর প্রতিটি আয়রণ পরমাণু একটি করে অক্সিজেন গ্রহণ করে।
রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি করে কোনটি
রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি করে কোনটি জানেন কি? চলুন আরও জানি রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়।
রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি হেম ও গ্লোবিন নামক প্রোটিন মিলে। হিমোগ্লোবিন তৈরিতে অংশ নেয় হেম বা আয়রন বা লৌহ।
রক্তের হিমোগ্লোবিন কত থাকলে ভালো
রক্তের হিমোগ্লোবিন কত থাকলে ভালো জানেন কি?
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় জানতে আমাদের সাথে থাকুন। লোহার উপস্থিতির কারণে, হিমোগ্লোবিন রক্তে লাল রঙ দেয়। আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরিমাপ করা আপনাকে আপনার লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সম্পর্কে একটি পরোক্ষ ধারণা দিতে পারে। সাধারণ হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা পুরুষদের জন্য প্রতি ডেসিলিটারে 14 থেকে 17 গ্রাম এবং মহিলাদের জন্য 12 থেকে 15 গ্রাম প্রতি ডেসিলিটারের মধ্যে।
রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর উপায়
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় জানি চলুন৷ আগে জানব রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর উপায়।
শরীরে লৌহের ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে লোহা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। লৌহসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মুরগির কলিজা, ঝিনুক, ডিম, আপেল, বেদানা, ডালিম, তরমুজ, কুমড়ার বিচি, খেজুর, জলপাই, কিশমিশ ইত্যাদি।
কি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে
কি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে জানেন কি? রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় জানেন? চলুন জানি।
ভিটামিন সিঃ
ভিটামিন সি-এর অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। তা ছাড়া ভিটামিন সি ছাড়া লোহা পুরোপুরিভাবে শোষণ হয় না। পেঁপে, কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, গোলমরিচ, সবুজ ফুলকপি (ব্রকোলি), আঙুর, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে।
ফলিক অ্যাসিডঃ
ফলিক অ্যাসিড একপ্রকার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এটি লাল রক্তকণিকা তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপাদান। সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, কলিজা, ভাত, শিমের বিচি, বাদাম, কলা, সবুজ ফুলকপিতে অনেক ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়।
বিটঃ
হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার ও পটাশিয়াম। এর পুষ্টিমান শরীরের লাল রক্তকণিকা বাড়ায়।
আপেলঃ
দিনে একটি করে আপেল খেয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে পারেন। আয়রনের উৎস আপেলে আরও নানা প্রকার পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতিদিন খোসাসহ একটি আপেল খান। অথবা সমানুপাতে আপেল ও বিটের রস মেশাতে পারেন।
ডালিমঃ
আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) সমৃদ্ধ ডালিম রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে। প্রতিদিন মাঝারি আকৃতির একটি ডালিম খাওয়ার চেষ্টা করুন। অথবা এক গ্লাস ডালিমের জুস খান।
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় চলুন জানি। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঝিম ধরা, ক্ষুধামান্দ্য ও দ্রুত হৃৎস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা যায়। যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনেক কম হয়, তবে রক্তাল্পতা বা এর চেয়েও মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয়
হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে কি হয় জানেন? রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় জানেন? আজ সবটাই জানাব, সাথে থাকুন।
হিমোগ্লোবিন বেড়ে গেলে রক্ত ঘন হয়৷ ছোট ছোট রক্তের ডেলা তৈরি হওয়ার সুযোগ বাড়ে৷ ভাল করে চিকিৎসা না হলে সেই সব রক্তের ডেলা হার্ট, ফুসফুস, মস্তিষ্ক বা পায়ের রক্তনালিতে জমে হার্ট অ্যাটাক, পালমোনারি এমবলিজম, স্ট্রোক বা পায়ে ডিপ ভেন থ্রম্বোসিসের মতো জটিল অসুখের প্রকোপে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ
হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারন জানি চলুন, রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় জানতেও আমাদের সাথে থাকুন।
শরীরে লৌহের ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে লোহা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। লৌহসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মুরগির কলিজা, ঝিনুক, ডিম, আপেল, বেদানা, ডালিম, তরমুজ, কুমড়ার বিচি, খেজুর, জলপাই, কিশমিশ ইত্যাদি। ভিটামিন সি-এর অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।
কি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে । রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ
- লৌহযুক্ত খাবার শরীরে লৌহের ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
- ভিটামিন সি ভিটামিন সি-এর অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।
- ফলিক অ্যাসিড ফলিক অ্যাসিড একপ্রকার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।
- বিট হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।
আমাদের শেষ কথাঃ রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়
আমাদের আজকের পোস্ট থেকে আশা রাখি আপনি জানতে পেরেছেন রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়। সেই সাথে জানতে পেরেছেন কি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে বা রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ কি হতে পারে। তাই আপনি নিয়ম মেনে চলুন সুস্থ্য থাকুন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আশা করি রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় বুঝতে পেরেছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
fasttechit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url