কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁচা হলুদের যে অসাধারণ ভেষজ উপকারিতা রয়েছে তা সম্ভবত সকলেরই জানা। হাজার বছর আগে আয়ুর্বেদের সূচনা থেকেই হলুদের ব্যাপারে অবগত ছিলেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা। প্রাকৃতিক কাঁচা হলুদ যে শরীরের সুস্থতার জন্য নিয়ামক বিশেষজ্ঞরা তা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। এছাড়া হলুদকে পুষ্টিকর উপাদানের পাওয়ার হাউজ বলা যায় যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করার নিয়ম এবং কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা যায়। 

এছাড়া আমাদের মধ্যে অনেকে কাঁচা হলুদ  দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত গ্রহণ এবং ব্যবহার করে থাকি। তাই কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহার  সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা উচিত।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা

গুড়া হলুদের উপকারিতা

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তো কিছুটা জানি। গুড়া হলুদের উপকারিতা কী জানা আছে? গুঁড়া হলুদ বাংলায় বাসন্তী হলুদ নামেও পরিচিত। এটি হলুদের মুখ্য জাতিগুলির মধ্যে একটি। গুঁড়া হলুদের উপকারিতা গুলো জেনে নেই চলুন-

আরও পড়ুনঃ ভাত খাওয়ার সুন্নত - ভাত খাওয়ার দোয়া কি?

ঔষধিক বৈশিষ্ট্যঃ

গুঁড়া হলুদে  কার্করিনোজেনিক উপাদানগুলি থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

শক্তিশালী বীর্যবর্ধকঃ

গুঁড়া হলুদের মানসম্মত বীর্যবর্ধক গুণাবলী রয়েছে। এটি পুরুষদের যৌন সমস্যা সম্পর্কিত সমস্যাদির প্রতিষ্ঠান ও সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে পারে।

চর্মরোগ প্রতিরোধকঃ

গুঁড়া হলুদের গুণগত গুণাবলী চর্মরোগের প্রতিরোধক ক্ষমতা থাকে। এটি ত্বকের অস্থিরতা কমাতে,ছোঁড়া, ব্রণ এবং ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। 

খাবারের রুচিঃ

গুঁড়া হলুদের আকর্ষণীয় রঙ ও মধুর স্বাদ এটিকে খাদ্য এবং রান্নার জন্য জনপ্রিয় করে। এটি পাকা সবজি, মাংস, মাছ এবং খাদ্য পণ্যের রান্নার স্বাদ এবং রংকে আরো মজার করে তুলতে পারে।

শুকনো হলুদের উপকারিতা

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতার জন্য এটি বেশ সমাদৃত,কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আমরা প্রায়ই চর্চা করি কিন্তু শুকনো হকুদের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা ধারণা রাখি না। কেবল রান্নায় ব্যবহারই শুকনো হলুদের একমাত্র উপকারিতা নয় কিন্তু।

শুকনো হলুদ বা হলুদ চূর্ণ স্থিতিবদ্ধ অবস্থায় একটি প্রকার হলুদ পাউডার বলা হয়, শুকনো হলুদের উপকারিতা গুলো জেনে নেয়া যাক-

১. ত্বকের যত্নঃ

শুকনো হলুদ ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এর মাধ্যমে ত্বক শীতল ও শান্ত হয়ে যায় এবং ব্রণ, ফোড়া, সোরেস, যখম এবং অন্যান্য চর্ম সমস্যাগুলি কমায়।

আরও পড়ুনঃ লেবুর পুষ্টিগুণ - লেবুতে কি ভিটামিন থাকে

২. গার্গল করার জন্য

শুকনো হলুদ গার্গল করলে মুখের সমস্যা বা মাইক্রোবিয়াল সমস্যা কমাতে পারে। গার্গল করলে মুখের ব্যাকটেরিয়া, মাইক্রোবিয়াল সমস্যা এবং মুখের দুর্গন্ধ কমে যায়।

৩. ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণঃ

শুকনো হলুদের মাধ্যমে রান্না করা খাবারে থাকা ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা জানবেন অথচ কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম জানবেন না সেটা কী করে হয়? কাঁচা হলুদ খাওয়ার নিয়ম মেনেই কাঁচা হলুদ খাওয়া উচিত।

সকালে এবং রাতে দু'বেলায় মিলিয়ে  প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রাম হলুদই যথেষ্ট।  সকালে খালিপেটে হলুদ খেয়ে নিতে হবে। তার পরে অন্তত আধ ঘণ্টা কিছু না খেয়ে থাকতে পারলে শরীরের জন্য সবচেয়ে ভাল। রাতে ঘুমোনোর আগে হলুদ-দুধ খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখুন যেন বেশি না খেয়ে ফেলেন। তাতে ক্ষতি হতে পারে। এভাবে নিয়ম মেনে খেলে কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতার ব্যালান্স থাকবে।

কাঁচা হলুদ খেলে কি ক্ষতি হয়

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার সাথে কাঁচা হলুদ খেলে কী ক্ষতি হয় বা হতে পারে তা কিন্তু জানতে হবে। চলুন জেনে নেই কাঁচা হলুদ খেলে কী ক্ষতি হতে পারে!

আরও পড়ুনঃ বাতিঘর কি - বাতিঘর প্রকাশনী

দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা হলুদ খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। অনেক সময়েই ক্যালশিয়ামের বিপাকক্রিয়া বিঘ্নিত করে হলুদ। যার ফলে প্রয়োজনীয় উপাদান ছেঁকে, বর্জ্য শরীরের বাইরে বার করতে পারে না বৃক্ক। বহুদিন ধরে জমতে জমতে সেগুলিই ক্যালশিয়াম অক্সালেট জাতীয় পাথরে পরিণত হয়। হলুদের গুণে প্রলোভিত হয়ে প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খাওয়া সকলের জন্য মোটেই স্বাস্থ্যকর নয় কেবলমাত্র হলুদের সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।

মুখে কাঁচা হলুদের উপকারিতা

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে  স্বাভাবিক ভাবেই রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার চলে আসে। মুখে কাঁচা হলুদের উপকারিতা কিন্তু জানলে অবাক হবেন। চলেন মুখে কাঁচা হলুদের উপকারিতা গুলো জানি

ত্বক ভালো রাখেঃ

হলুদে আছে প্রাকৃতিক উপাদান কারকিউমিন, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সিরোসিস ও একজিমার কারণে হওয়া ত্বকের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।

দ্রুত ক্ষত উপশম করেঃ

হলুদ দ্রুত ত্বকের  ক্ষতস্থানের ওপর লাগিয়ে রাখলেও তা সারাতে সহায়তা করে।

বলিরেখা কমায়ঃ

বয়সের ছাপ কমাতে সহায়তা করে হলুদ। কারণ এতে আছে কোষকলার মাত্রা বৃদ্ধি ও আর্দ্রতা রক্ষা করার ক্ষমতা। এর মানে হল, হলুদ খুব সহজে বলিরেখা ও ত্বকের ভাঁজ দূর করতে সহায়াত করে।

ব্রণ ও কালো দাগ কমায়ঃ

হলুদে থাকা কারকিউমিন এমন এক ধরনের এঞ্জাইম যা রোদ ও ‘হাইপার পিগমেন্টেইশন’য়ের কারণে হওয়া কালো দাগ ও পোড়াভাব কমাতে কার্যকর।

প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খেলে কি হয়

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা না জেনে প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খান? প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খেলে কী হয় জানেন?প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খেলে কী হয় চলুন জানা যায়

কাঁচা হলুদে আছে ভিটামিন সি। সুতরাং রোজ নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খাওয়া ও রান্নায় হলুদ ব্যবহার করলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হয়। সাধারণ জ্বর সর্দি হাঁচি কাশির পাশাপাশি কোভিডের মতো অসুখকে ঠেকাতে পারে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন হলুদের মধ্যে থাকা কারকুমিন বিভিন্ন অসুখবিসুখের বিরুদ্ধে লড়াই এর এক অন্যতম হাতিয়ার।

কাঁচা হলুদ খেলে কি ফর্সা হয়

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা বলে তো শেষ করা যাবে না। কাঁচা হলুদ খেলে কি ফর্সা  হয় মানুষ? চলুন কাঁচা হলুদ খেলে কি ফর্সা হয় কিনা যেনে নেই।

হলুদ খেলে ত্বকের রং ফর্সা হয়। হলুদের মধ্যে রয়েছে একটি বিশেষ উপাদান কারকিউমিন। এটি কেবল হলুদেই পাওয়া যায়। এটিকে জাদুকরি উপাদান বলা হয়। এটি ত্বকের অধিকাংশ সমস্যা সমাধান করতে পারে। কারকিউমিন রং ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁচা হলুদের রস খেলেও সমান উপকারিতা পাওয়া যায়।

হলুদ বেশি খেলে কি হয়

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা জানছি। কিন্তু কাঁচা হলুদ বেশি খেলে কি হয় জানেন? হলুদ বেশি খেলে কি হয় জেনে নেয়া যাক।

অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খেলে তা আমাদের শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া রয়েছে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ভয়।  দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খেলে ডায়েরিয়া, পেটের নানা সমস্যা, বমি বমি ভাব বা অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।  অনেক সময় হলুদ অক্সালেটরের স্বাভাবিক বিপাক বিঘ্নিত করে দেয়। এর ফলে ওই অক্সালেট কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। 

অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খাওয়ার অভ্যাস অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ওষুধের কার্যকারীতা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খেলে তাঁদের ব্লাড সুগারের মাত্রা আচমকাই কমে যেতে পারে।

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতার অনেক গুলো দিক আমরা জেনেছি ইতোমধ্যে আলাদাভাবে। এখন শারীরিক কী কী সমস্যায় কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা দেখা দেয় জেনে নেই-

উপকারিতাঃ

চুলকানি, চোখের প্রদাহ, ক্যান্সার, বাইপাস সার্জারি, বিষন্নতা ডায়াবেটিস পেট খারাপ ভাইরাস সুরক্ষা,খাদ্য নালীতে প্রদাহ, আর্থ্রাইটিস,  ওজন কমানো

যক্ষা, অস্ত্রপচার থেকে পুনরুদ্ধার করে।

অপকারিতাঃ

পিত্তথলির সমস্যা রক্তক্ষরণের সমস্যা, হরমোন সংবেদনশীল অবস্থা, আয়রনের ঘাটতি, হলুদ কিডনি স্টোনসের ঝুঁকি বাড়ায়,হলুদ ব্যবহারে বন্ধ্যাত্ব সমস্যা হতে পারে, হলুদ আপনার রক্তকে পাতলা করে।

আমাদের শেষ কথাঃ কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা

হলুদ একটি প্রাকৃতিক এন্টি এক্সিডেন্ট। এটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে  টর বিকল্প নেই। এর অনেক গুণাগুণ রয়েছে। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। 

কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন থেকে এর ব্যবহার করতে হবে, এর প্রভাবে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ডাক্তার পরামর্শ নেয়া উচিত। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

fasttechit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url