লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা
"সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী"এই গান শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। লাউ আমাদের অতি পরিচিত সবজি। লাউয়ের নানান পদের রান্না আমরা করে থাকি। অনেকের অরিয় সবজির তালিকায় লাউ উপরের দিকেই থাকে। কিন্তু লাউ সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি আসলে? লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কী জানা আছে আমাদের?
লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জানলে কিন্তু অবাক হবেন আপনি। চলুন আজ লাউ সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা
- লাউ কি
- লাউ ইংরেজি কি | লাউ এর ইংরেজি কি
- লাউ চাষ পদ্ধতি
- লাউ এর উপকারিতা
- লাউ শাকের উপকারিতা
- লাউয়ের বীজের উপকারিতা
- লাউ এর অপকারিতা
- উন্নত জাতের লাউ বীজ
- আমাদের শেষ কথা
লাউ কি
লাউ কি? আমরা লাউকে সবজি হিসেবে চিনি,এর কি আরো কোনো পরিচয় আছে? আভিধানিক অর্থে লাউ কি একটু জেনে নেই।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি - ড্রাগন ফলের উপকারিতা
লাউ এক প্রকার লতানো উদ্ভিদ যা এর ফলের জন্যে চাষ করা হয়, যা কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, আর পরিপক্ব অবস্থায় শুকিয়ে এটি বোতল, পাত্র বা নল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি সবচেয়ে পুরোনো চাষকৃত সব্জিগুলোর একটি। এটির জন্ম আফ্রিকায়। কচি লাউয়ের বাইরেটা হাল্কা সবুজ এবং ভেতরে সাদ শাস থাকে। এই লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিন্তু আমাদের তেমিন ধারণা নেই। লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে তবেই লাউ খাওয়ার পাতে নেয়া উচিত।
লাউ ইংরেজি কি | লাউ এর ইংরেজি কি
লাউ তো আমরা প্রত্যেকে চিনি, লাউয়ের ইংরেজি কি জানা আছে? লাউয়ের ইংরেজি কিন্তু বেশ ইন্টেরেস্টিং। লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা ৷ সাথে সাথে এর ব্যাপারে বেসিক বিষয় গুলো জেনে নেয়া যায় যেমন লাউয়ের ইংরেজি কি এটা জানা থাকলে মন্দ হয় না। লাউয়ের ইংরেজি নাম হলো Bottle Ground.
লাউ চাষ পদ্ধতি
আমরা লাউ সাধারণত বাজার থেকে কিনে এনে খাই,কিন্তু লাউ চাষ পদ্ধতি জানা থাকলে কিন্তু একেবারেই টাকটা তরতাজা লাউ আমরা পেতে পারি। সেই সাথে লাউ চাষ পদ্ধতি কিন্ত লাউকে ব্যাবসায়িকভাবে ভাবতেও সাহায্য করবে। লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা জানলে আপনার মনেই হবে লাউ চাষ পদ্ধতি জেনে চাষ শুরু করে দেই,লাউ চাষ পদ্ধতিটা জেনে নেয়া যাক তাহলে।
লাউ চাষের জন্য পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করাই ভালো। পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে রোপণ করলে হেক্টর প্রতি ৮০০-১০০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। তবে মাটি দিয়ে মাদা তৈরি করেও চারা উৎপাদন করা যায়। প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বপন করতে হবে। ৪-৫ দিনের মধ্যেই বীজ অঙ্কুরিত হবে।
আরও পড়ুনঃ কাঁচা কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের দেশে প্রধানত বসত বাড়ির আশপাশে যেমন গোয়াল ঘরের কিনারায় বা পুকুর পাড়ে ২-৩টি লাউ গাছ লাগানো হয়। বেশি পরিমাণ জমিতে লাউয়ের চাষ করতে হলে প্রথমে জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে। লাউ চাষের জন্য ২×২ মিটার দূরত্বে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বোনা উচিত। গ্রীষ্ম মৌসুমে লাউ মাচাবিহীন অবস্থায় চাষ করা যায়। তবে মাচায় ফলন বেশি হয়। এছাড়া পানিতে ভাসমান কচুরিপানার স্তূপে মাটি দিয়ে বীজ বুনেও সেখানে লাউ জন্মানো যেতে পারে।
চারা একটু বড় হলে প্রতি মাদায় ২টি করে চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে ঝুরঝুরা করতে হবে। লাউগাছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি প্রতিদিন দিতে হবে।
গাছ যখন ১৫-২০ সেন্টিমিটার বড় হয় তখন গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা কঞ্চিসহ মাটিতে পুঁতে দিতে হয়।
এ সবজিতে রেডপামকিন বিটল পোকার আক্রমণ হতে পারে। এ পোকা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরে ধরে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া কিছু প্রজাতির ঘাসের মাধ্যমে লাউয়ের ‘মোজাইক ভাইরাস’ রোগ হতে পারে।
বারি লাউ-১ এর চারা রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল সংগ্রহ করা হয়। ফল তোলা বা সংগ্রহ করার উপযুক্ত পর্যায় হলো- ফলের গায়ে প্রচুর শুং এর উপস্থিতি থাকবে। ফলের গায়ে নখ দিয়ে চাপ দিলে খুব সহজেই নখ ডেবে যাবে পরাগায়নের ১২-১৫ দিন পর ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়।
লাউ এর উপকারিতা
লাউ কিন্তু অতি উপাদেয় সবজি,সেই সাথে এটা কার্যকরীও। লাউয়ের কিছুই কিন্তু ফেলে দেয়ার নেই। লাউ পাতা ও ডাটা শাক হিসেবে খাওয়া হয়,লাউ নিজে দারুণ সবজি লাউয়ের ছালও কিন্তু ভাজি করে খেয়ে নেয়া যায়।
লাউ এর উপকারিতা কিন্তু অনেক। লাউ এর উপকারিতা, এর পুষ্টি গুন সম্পর্কে জানলে কিন্তু অবাকই হবে। চলুন লাউ এর উপকারিতা জেনে নেয়া যাক-
আরও পড়ুনঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা
- লাউয়ের ৯৬ শতাংশই পানি। ফলে নিয়মিত লাউ খেলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়।
- লাউ রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- লাউয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে, যা হার্টের জন্য উপকারী।
- জন্ডিস ও কিডনির সমস্যায়ও লাউ উপকারিতা অনেক।
- লাউয়ে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি ও প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে। এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী সবজি লাউ।
- লাউ রয়েছে দ্রবণীয়, অদ্রবণীয় ফাইবার ও পানি। দ্রবণীয় ফাইবার খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে।
- লাউ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
লাউ শাকের উপকারিতা
লাউ শাক ভীষণ সুস্বাদু সেইসাথে লাউ শাকের উপকারিতা ও অনেক। লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা যেমন জেনে রাখার বিষয় লাউশাকের উপকারিতাও কিন্তু জেনে রাখা উচিত।
- লাউ শাকে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন-সি। যা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ও ঠাণ্ডা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- প্রচুর আঁশ থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে লাউ শাক। এছাড়া পাইলস প্রতিরোধেও সহায়ক।
- বিটা-ক্যারোটিন, লুটেইন এবং জিয়েজ্যান্থিনে পরিপূর্ণ হলো লাউ শাক। বিটা-ক্যারোটিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং লুটেইন ও জিয়েজ্যান্থিন চোখের নানাবিধ রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।
- লাউ শাক দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই লাউ শাক খেলে মস্তিষ্ক থাকবে ঠাণ্ডা এবং ঘুমও হবে গভীর।
- লাউ শাকে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম হাড় শক্ত ও মজবুত করে। অস্টিওপোরেসিস এবং অন্যান্য ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত রোগের ঝুঁকি কমায় লাউ শাক।
লাউয়ের বীজের উপকারিতা
লাউ বীজের উপকারিতার কথা জেনে অবাক হচ্ছেন?লাউ বিজ হয়তো অনেকে ফেলে দেন কিন্তু লাউ বীজ শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। লাউয়ের উপকারিতা এবং অপকারিতা জানার সাথে সাথে লাউ বীজের উপকারিতা জেনে রাকা ভালো।
বীজে থাকে ৪৫% ফ্যাট এসিড, প্রোটিন, অ্যামাইনোএসিড ইত্যাদি। বীজের তেল মাথাব্যথা দূর করে।
লাউ এর অপকারিতা
লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা ই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। লাউ যে কেবল উপকারী তা নয় কিন্তু লাউ এর অপকারিতা ও কিছু রয়েছে। লাউ এর অপকারিতা সম্পর্কে না জেনে লাউ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ ক্ষতির কারণ হতে পারে।
- লাউ খেলে কারো কারো ক্ষেত্রে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের লাউয়ের রস খেতে নিষেধ করেন বিশেষজ্ঞরা।
- লাউয়ের রস অত্যধিক তেতো হলে, শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। ডায়রিয়া, এমনকি বমি বমি ভাব বাড়তে পারে। সেকারণে খাওয়ার আগে লাউয়ের রস চেখে দেখা জরুরি।
- অতিরিক্ত লাউয়ের রস পান করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
উন্নত জাতের লাউ বীজ
লাউ চাষ করতে হলে উন্নত জাতের লাউ বীজ দরকার। উন্নত জাতের লাউ বীজ কোনটা কিভাবে উন্নত জাতের লাউ বীজ পেতে পারি সেটা জেনে নেবো
বিইউ হাইব্রিড লাউ-১ ও বিইউ লাউ-১ নামের দুটি নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে গবেষণার মাধ্যমে লাউয়ের উচ্চফলনশীল এ জাত দুটির মধ্যে একটি হাইব্রিড। অন্যটি উন্মুক্ত পরাগায়িত। দুটি জাতেরই ফলনের তুলনায় অঙ্গজ বৃদ্ধি খুব কম, যা আধুনিক বা স্মার্ট কৃষির জন্য একেবারে মানানসই।
আমাদের শেষ কথাঃ লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা
লাউ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলাম। লাউ আমাদের জন্য কতটা উপকারী এবং সাশ্রয়ী সবজি তা উক্ত আলোচনায় স্পষ্ট করেই বোঝা যায়। লাউ চাষের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণের সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথাও ভাবতে পারি আমরা এখন। তবে লাউ খাওয়ার আগে অবশ্যই এর ক্ষতিকর দিকগুলো মাথায় রাখতে হবে।
fasttechit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url